এটি গেল ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির প্রথম দফার বৈঠকের দৃশ্য। যেখানে অনেকটা অপদস্থ হয়েছিলেন জেলেনস্কি। এমনকি স্যুট ছাড়া হোয়াইট হাউসে গিয়ে মার্কিন সাংবাদিক ব্রায়ান গ্লেনের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তার স্যুট আছে কিনা সে প্রশ্ন শুনতে হয় জেলেনস্কিকে। জবাবে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্যুট পরবেন না।
এবার সে ভুল করেননি জেলেনস্কি। স্যুট পরেই হোয়াইট হাউসে উপস্থিত হন তিনি। জেলেনস্কির ডিজাইনার এলভিরা গাসানোভা জানান, স্যুটটির নকশায় সামরিক ছোঁয়া আছে। এ সময় হোয়াইট হাউসে হাসিমুখে তাকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। একসঙ্গে ওভাল অফিসে ঢোকেন দুই নেতা।
আরও পড়ুন:
বৈঠকে থাকা একই সাংবাদিক এবার জেলেনস্কির পরনে কালো স্যুটের ব্যাপক প্রশংসা করেন। জবাবে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট বলেন, আগের ঘটনা আমার মনে আছে। এ সময় সাংবাদিক ব্রায়ান গ্লেন তার কাছে ক্ষমা চান। ট্রাম্পও এতে যোগ দিয়ে বলেন, এই সেই ব্যক্তি যে আগেরবার আপনার পোশাক নিয়ে কথা বলেছিল।
মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানেই ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে দেখা গেল বিপরীত চিত্র। আগের বৈঠকে হট্টগোল দেখা দিলেও, এবার পরিবেশ ছিল অনেকটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ। আলোচনা যেন কোনোভাবে ভেস্তে না যায়, সেদিকেই নজর ছিল ইউক্রেনের। আগের বৈঠকে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ না দিয়ে চলে যাওয়ায় জেলেনস্কিকে অকৃতজ্ঞ বলেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
এবার বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলেনস্কি কমপক্ষে আটবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্পকে। রক্তপাত বন্ধ ও যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি। তবে বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত থাকলেও চুপচাপ বসেছিলেন জেডি ভ্যান্স, স্টিভ উইটকফ ও মার্কো রুবিও।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকটিকে অসাধারণ বলেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি জানান, ভূখণ্ড ছাড়ের বিষয়টি তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে চান। এছাড়া, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন:
যদিও ইউক্রেনকে ন্যাটতে যোগ দেয়ার শর্ত ত্যাগ করতে বলছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, ভূখণ্ডের বিষয়েও কিয়েভকে ছাড় দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব পক্ষের মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সব ঠিক হলেও চূড়ান্ত হয়নি কিছুই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো মারিয়া স্নেগোভায়া বলেন, ‘দুই পক্ষের বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে একটি পশ্চিমা সামরিক মোতায়েন। যা নিয়ে বেশ আগ্রহী জেলেনস্কি। এতে পুতিনকে অন্যান্য অনেক বিকল্প ভাবতে হবে। ক্রেমলিন এ বিষয়ে রাজি হবে কি-না তাও স্পষ্ট নয়। অতীতেও পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা নিয়ে রাশিয়ার বাধার মুখে পড়ে ইউক্রেন। তবে এবার সব পক্ষই শান্তির কথা বলছে।’
এদিকে, ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক ঘিরে আগে থেকেই হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ঢল নামে। বৈঠক আয়োজনের অল্প সময়ের নোটিশে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সবার মাঝে। চারপাশে পুলিশের গাড়ির সাইরেন, মোটরসাইকেল ও নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।