মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে আলোচনার টেবিলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রথমে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এর তিন দিন পর হোয়াইট হাউজে আলোচনায় বসেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্টসহ ৭ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে। দুই দফার আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক আয়োজন এবং ইউক্রেনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউরোপকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মতও হন রুশ প্রেসিডেন্ট। এদিকে হোয়াইট হাউজ থেকে ফিরে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে ইউক্রেন।
মস্কোর দাবি ইউক্রেন ভূখণ্ডে ন্যাটোর উপস্থিতি কোনোভাবেই মানবে না তারা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানান, রাশিয়া ছাড়া ইউক্রেনের শান্তি আলোচনা কখনো আলোর পথ দেখবে না। তার অভিযোগ, ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের অবস্থান পাল্টাতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘রাশিয়া ছাড়া যৌথ নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব মেনে নেয়া যায় না। এটি কাজ করবে না। রাশিয়া একাধিকবার ব্যাখ্যা করেছে যে, মস্কো তার স্বার্থকে অতিরঞ্জিত করে না। তবে রাশিয়া বৈধ স্বার্থ দৃঢ় ও কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করবে বলে আশা করে মস্কো।’
এরইমধ্যে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে কাজ শুরু করেছে ন্যাটো সদস্যের নেতারা। রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে কিয়েভকে রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন।
এদিকে পোল্যান্ডের অভিযোগ দেশটির পূর্বাঞ্চলে ভূট্টার জমিতে রাশিয়ার একটি ড্রোন বিস্ফোরিত হয়েছে। যার মাধ্যমে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে উস্কানি দিচ্ছে মস্কো। দাবি পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। আর জার্মানি বলছে, রাশিয়া শান্তি চুক্তিতে আগ্রহী তা পুতিনকে এখনই প্রমাণ করতে হবে। এরমধ্যে দিয়েই ইউক্রেন ও ইউরোপে শান্তি আসবে।
আরও পড়ুন:
জার্মান সরকারের ডেপুটি মুখপাত্র স্টিফেন মেয়ার বলেন, ‘পুতিন এখন যে কাজটি করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুতিনকে দেখাতে হবে যে শান্তি চুক্তিতে তার গভীর আগ্রহ রয়েছে। জার্মানির আশা এ প্রক্রিয়াটি সত্যিই ইউক্রেনের জন্য এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য সফলতা বয়ে আনবে।’
পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিস্লাভ কোসিনিয়াক-কামিজ বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে রাশিয়া বেশ কৌশলী আচরণ করে। এমন এক সময়ে যখন শান্তি নিয়ে আলোচনা চলছে,যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইউক্রেনও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ। তবে রাশিয়ার উস্কানিমূলক আচরণ যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে।’
ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। আর্থিক ব্যয়ের সিংহভাগ তাদেরই বহন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘যুদ্ধ এবং রক্তপাত বন্ধ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে করা উচিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আশা ইউরোপ এখানে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট বলেছেন, আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবসময় রাজি। তবে যতক্ষণ যুদ্ধ বন্ধ হবে না ততক্ষণ কোনো পদক্ষেপ নেবে না ওয়াশিংটন। নিরাপত্তার খরচে সিংহভাগ ইউরোপকেই বহন করতে হবে।’
এদিকে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করা উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বীর বলে প্রশংসা করেছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানায়, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সহায়তায় কুরস্ক অঞ্চল নিজেদের করতে পেরেছে রাশিয়া।