চীনের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে সীমান্ত দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তির ব্যাপারে আগ্রহী মোদি প্রশাসন

ওয়াং ইয়ি, নরেন্দ্র মোদি
বিদেশে এখন
0

শুল্কযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই মস্কোতে পাড়ি দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর জেরে, নয়াদিল্লির সঙ্গে জ্বালানি প্রকল্প সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে মস্কো। এছাড়াও, চীনের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে সীমান্ত দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তির ব্যাপারে আগ্রহী মোদি প্রশাসন। বিপরীতে ভারতের ওপর চাপিয়ে দেয়া ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা করছেন দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরে পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর। যেখানে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিতে রাজি ছিল না বিজেপি সরকার। আর দ্বিতীয় ধাক্কাটি লাগে ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার দায়ে নয়াদিল্লির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

কূটনীতির এই খেলায় টিকে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে ভারত। সামনে এসেছে রাশিয়া ও চীন ফ্যাক্টর।

সীমান্ত সংকট সমাধানে চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারত–চীন সম্পর্কের শীতলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা আসে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে। 

সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, গালওয়ানে সংঘাতের পাঁচ বছর পর শত্রুতা ভুলে ভারত ও চীনের কাছাকাছি আসার প্রধান তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি। এমনকি ভারতের ওপর চাপিয়ে দেয়া ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে সমালোচনাও করছেন দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত।

আরও পড়ুন:

ভারতে চীনা রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং বলেন, ‘অনেক দিন ধরে মুক্ত বাণিজ্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে। কিন্তু এখন তারা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের জন্য শুল্ককে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে এবং আরও বাড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। চীন বিনয়ের সাথে এর নিন্দা জানায়।’

এছাড়াও, চলতি মাসের শেষে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ২৮০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী এই দুই দেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে এক হলে পাল্টে যেতে পারে ভূরাজনীতির বর্তমান ভরকেন্দ্র- বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর শেষ হতে না হতেই রাশিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ৩ দিনের এই সফরে আলোচনা হবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে।

রাশিয়া থেকে তেল কেনার অপরাধে ভারতীয় পণ্যে দুই দফায় মোট ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। শর্ত দেন মস্কো থেকে আর তেল কিনতে পারবে না নয়াদিল্লি। 

কিন্তু মোদি সরকার কোনো উচ্চবাচ্চ না করায় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন সফরের কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। এই পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে মস্কো। সবশেষে নয়াদিল্লির সঙ্গে যৌথ জ্বানালি প্রকল্প সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম এবং ভারতীয় বাজারে রাশিয়ান তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা খুবই ফলপ্রসূ। আমরা শক্তি সম্পদ আহরণের জন্য যৌথ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আগ্রহী।’

নয়াদিল্লির এই চীন ও রাশিয়া প্রীতিকে ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য দ্বন্দ্ব, দুর্লভ খনিজের বাজার ধরার প্রতিযোগিতা, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের বিরূপ মনোভাব আর মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা- এই সবকিছুই ভারতের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে মত তাদের।

সেজু