কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস নয়: জয়শঙ্কর

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর
বিদেশে এখন
0

ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত মোট ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকরে বাকি মাত্র ৩ দিন। তবু দেশের কৃষকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না বলে আবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। নয়াদিল্লীতে হওয়া ইকোনমিক টাইমস ফোরামের এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া, আমাদের কেউ বলেনি যে আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু রেডলাইন রয়েছে। যে বিষয়গুলো আমাদের কৃষক ও ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীদের স্বার্থ জড়িত। এজন্য আমরা এ বিষয়ে কোনো আপস করতে পারি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কের বোঝায় এরইমধ্যে টালমাটাল অবস্থা ভারতের। হুঁশিয়ারির পরও রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করায় শাস্তি হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হতে যাচ্ছে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে।

এ অবস্থায় অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লীর মধ্যকার বাণিজ্য বৈরিতা এখন তুঙ্গে। যা আরও তীব্র হয়েছে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ভারত সফর বাতিল করায়। যার ফলে দরকষাকষির সুযোগ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে ভারত দাবি করছে এখনও আলোচনা চলমান। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। নয়াদিল্লীতে হওয়া ইকোনমিক টাইমস ফোরামের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শুল্ক ইস্যুতে চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে ট্রাম্পের বিদেশ নীতি নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতকে শাস্তি দিলেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনায় চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভও ঝেড়েছেন জয়শঙ্কর।

আরও পড়ুন:

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারতকে লক্ষ্য করে যে যুক্তিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা বৃহত্তম তেল আমদানিকারক চীনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি। এছাড়া বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়নি। অথচ শুধু আমাদের বলা হচ্ছে আমরা যুদ্ধে অর্থায়ন করছি বা পুতিনের কোষাগারে অর্থ রাখছি। ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যের চেয়ে ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বাণিজ্য বড়।’

ইউক্রেনে অভিযানের জেরে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ২০২২ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি রেকর্ড ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয় বিশ্ব বাজারে। তখন বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরানোর লক্ষ্যে রাশিয়ার তেল কিনতে ভারতকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি বলেও দাবি করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর কেবল বাজার স্থিতিশীল রাখতেই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছন জয়শঙ্কর।

যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত ভারতকে ডেইরি, পোল্ট্রি, ভুট্টা, সয়াবিন, গম, ফলমূল ও বাদামের মতো কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কৃষি শিল্প রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের এসব পণ্য নিজেদের বাজারে ঢুকতে দিতে রাজি নয় ভারত। এ অবস্থায় উচ্চ শুল্কারোপে হুমকির মুখে পড়েছে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি মধ্যকার বছরে ১৯০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন।

ইএ