২০২২ সালে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর নিজেদের প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়িয়েছে ইউক্রেন। আর যুদ্ধক্ষেত্রে এই অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য ভাণ্ডার এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ; যা ইউক্রেনের যে কোনো মিত্র দেশের জন্যই অমূল্য। তথ্য ভাণ্ডারটি অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মন্ত্রী মাইখাইলো ফেডোরভ। তবে এসব তথ্য ভাগাভাগি করার বিষয়ে ইউক্রেন খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মন্ত্রী মাইখাইলো ফেডোরভ বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা যেকোনো দেশ এবং ভূ-রাজনৈতিক স্তরের জন্য অমূল্য। যা জানানোর জন্য আমাদের নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। আমি বিশ্বাস করি যে, শক্তিশালী অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এসব তথ্য ব্যবহার করা যাবে। এর জন্য খুব শিগগিরই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীকে প্রযুক্তিগতভাবে মোকাবিলায় ইউক্রেনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চালকবিহীন স্থলযান- ইউএভি এবং ড্রোন। মস্কোর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ড্রোন ব্যবহার করছে কিয়েভ। এছাড়া লড়াইয়ের ময়দানে থাকা সেনাদের কাছে গোলাবারুদসহ অন্যান্য যুদ্ধ রসদ পৌঁছাতে কাজে লাগানো হচ্ছে কয়েক হাজার চালকবিহীন স্থলযান, যা ২০২৪ সালের তুলনায় বেশি।
মাইখাইলো ফেডোরভ বলেন, ‘রাশিয়ানরা তাদের ফাইবার-অপটিক ড্রোনের পরিসর বৃদ্ধি করেছে। এ অবস্থায় আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রযুক্তির কল্যাণে লড়াই এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ডিভাইসের। যুক্ত করা হচ্ছে ইলন মাস্কের স্টারলিংক নেটওয়ার্ক ডিভাইস। যা এখন ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। প্রায় ৩০ হাজার স্টারলিংক ডিভাইস স্থাপনে পোল্যান্ড খরচ বহন করছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ এ সহকর্মী।
আরও পড়ুন:
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন মন্ত্রী মাইখাইলো ফেডোরভ বলেন, ‘চালকবিহীন স্থলযান বা ইউজিভি দিয়ে ৯০ শতাংশ রসদ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। আমার মনে হয় এর মধ্য দিয়ে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। যে যেকোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যা থেকে রক্ষায় অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক বা যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরালো করা হচ্ছে।’
পাল্টা আক্রমণে ইউক্রেন চালকবিহীন স্থলযান-ইউএভি এবং ড্রোন সক্ষমতা বাড়ানোয় সীমান্ত লাগোয়া রুশ বাসিন্দাদের মাঝ বাড়ছে আতঙ্ক। এ অবস্থায় ইউক্রেনীয় ড্রোন ও ইউএভি প্রতিরোধী জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমরা অ্যান্টি-ড্রোন জাল স্থাপনের কাজ করছি। এটি আমাদের সন্তানদের, বাবা-মা এবং কিন্ডারগার্টেন কর্মীদের নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও কাজে আসাবে। বেলগোরোডের এই কিন্ডারগার্টেনের পুরো অঞ্চলে এটি স্থাপন করা হয়েছে। এটি নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য ইতিবাচক দিক।’
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা থেকে সুরক্ষায় প্রতিরক্ষামূলক জাল স্থাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সামাজিক সুবিধামূলক স্থাপনাগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বেলগোরোড কর্তৃপক্ষ।
যা সেপ্টেম্বরের ১ তারিখের সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫ লাখ বর্গমিটার প্রতিরক্ষামূলক জাল কেনা হয়েছে। যার মধ্যে শুধু বেলগোরোড এবং আশেপাশের জেলার জন্য বরাদ্দ এক লাখ বর্গমিটার। পুরো কর্মসূচিটি ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।