'পাহাড় কিংবা সমুদ্র কোনো কিছুই সম্পর্ক তৈরিতে বাধা হতে পারে না'। ২০২৪ সালে কাজাখস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন-এসসিও সম্মেলনে এ কথা বলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বছর ঘুরে এবারের এসসিও সম্মেলনে তারই প্রতিফলন দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব।
গত এক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বৈশ্বিক রাজনীতিতে। মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও প্রতিযোগী দেশগুলোকে চাপে ফেলতে চলতি বছর এপ্রিলে শুল্ক যুদ্ধের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিকসভূক্ত দেশগুলোই ছিল তার মূল টার্গেট। ব্রিকসের অন্যতম সদস্য ভারত ও ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে ওয়াশিংটন। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ওপর শুরুতে ১৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলেও চুক্তির করে তা ৩০-এ নামিয়ে আনে বেইজিং।
আরও পড়ুন:
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প যখন নয়াদিল্লির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করেন, তখন মোদিও নৌকার পাল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। মার্কিন ছায়াতল থেকে বেরিয়ে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। এ যেন নদীর এক পাড় ভেঙ্গে আরেক পাড় গড়ার গল্প।
চীনের উদ্যোগে এবারের এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে প্রায় ৭ বছর পর দেশটির তিয়ানজিতে পা রেখেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। মার্কিন শুল্ককে মোকাবিলা করতে চীনের মতো মজবুত শক্তিকে পাশে চায় নয়দিল্লি। অপরদিকে মার্কিন আধিপত্যে লাগাম টানতে ভারতের সহায়তা দরকার বেইজিংয়ের।
একে অপরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাই এক পথে হাঁটছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি-জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরইমধ্যে গত সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরকালে চীন ও ভারতের মধ্যকার ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত নিয়ে চলা বহুদিনের সংকট সমাধানে আলোচনা করেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক মজবুত করাসহ সরাসরি ফ্লাইট চালু, ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিলসহ বাণিজ্য বাড়াতে আলোচনা করেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে রেয়ার আর্থ মিনারেল সরবরাহেও রাজি হয়েছে বেইজিং।
এদিকে শি জিনিপিং ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আরও একবার সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এবারের এসসিও সম্মেলনে তাই সবার চোখ চীন-রাশিয়া ও ভারত এই তিন রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের দিকে। এরইমধ্যে আগামী ডিসেম্বরে ভারত সফরের ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এছাড়া মার্কিন বাণিজ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নয়াদিল্লিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে মস্কো।
ভারত ছাড়াও ব্রিকসের অন্য দেশগুলোও রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে তৎপর। ব্রাজিল যার মধ্যে অন্যতম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই মূলত কাজ করে যাচ্ছে ব্রিকসের সদস্যভুক্ত দেশগুলো। ডলারের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় তারা।