সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু। তবে ইসরাইলি আগ্রাসন এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত ফিলিস্তিনের গাজার সে সুযোগ পাচ্ছে না। নেতানিয়াহুর সেনারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলাকে বোমায় গুঁড়িয়ে দেয়ায় নেই শ্রেণিকক্ষ, নেই কোন শিক্ষার উপকরণ।
যখন অধিকাংশ দেশের শিশুরা নতুন পোশাক আর বই নিয়ে শ্রেণিকক্ষে হাজির হচ্ছে, তখন গাজার শিশুরা তাদের ব্যাগ নিয়ে এদিক সেদিক ছুটছে এক মুঠো খাবারের জন্য। সবমিলিয়ে বলা যায় শিক্ষাব্যবস্থাসহ ভেঙ্গে পড়েছে তাদের সকল মৌলিক অধিকার।
গাজার শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর অন্যান্য শিশুদের মতো স্কুলে যেতে পারছি না। তারা নতুন পোশাক পরে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায় আর আমরা আমাদের ব্যাগ খাবার সংগ্রহের কাজে লাগাই। আমার মন চায় স্কুলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বসে পড়ালেখা করতে।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা অধিকার বঞ্চিত। জন্মের পর থেকে যুদ্ধের মধ্যেই বসবাস করছি। গাজার বাইরের সব শিশুরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রায় দুই বছর ধরে পড়াশোনা করতে পারিনি।’
আরও পড়ুন:
এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে ডুবে না যায় তাই এ ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য লড়াই করছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষাগুরু। তাঁবুর ভেতর গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষ। যেখানে স্বেচ্ছায় শিশু-কিশোরদের পাঠদান শুরু করা হয়েছে।
শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম যে, আরবসহ অন্যান্য দেশের মতোই আমরাও আমাদের স্কুল এবং শ্রেণীকক্ষ থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করব। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা অধ্যাপক আহমেদ আবু রিজকের নেতৃত্বে এভাবেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
গাজা সিটি দখলের জন্য ইসরাইলি বাহিনী আক্রমণের মাত্রা বাড়ানোয় তাঁবুর ভেতর স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের এই শিক্ষাকার্যক্রমও নিরাপদ নয়। আর ভ্রাম্যমাণ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিশ্চিতও অসম্ভব। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও, শিক্ষিত জাতি গড়ার কাজে নিজেদের বিলিয়ে দিতে চান শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলেন, ‘বেশিরভাগ শিশুই এখন রাস্তায় থাকে। তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার মতো স্কুল অবশিষ্ট নেই। এ অবস্থায় যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি তাদের শিক্ষা যাতে নিশ্চিত করা যায়। আমরা যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে এটি চালু রাখতে চাই। কারণ শিক্ষিত মানুষই একটি জাতির শক্তি।’
ফিলিস্তিনের শিক্ষামন্ত্রী আমজাদ বারহাম জানান, গাজার ৩০৭টি স্কুলের মধ্যে ২৯৩টি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আর জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের তথ্য, জুলাই মাসে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ক্ষতির মূল্যায়ন অনুসারে গাজার ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে পুনরায় কার্যক্রম শুরুর জন্য যার ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই বড় ধরনের পুনর্বাসন বা সম্পূর্ণ পুনর্গঠন প্রয়োজন।