রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন পিছু ছাড়ছেনা হিমালয়ের কন্যা নেপালের। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এক দশকের গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারায় দেশটির অন্তত ১৬ হাজার মানুষ। ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে ২০০৮ সালে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হয় নেপাল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সংবিধান প্রণয়নের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরে দেশটি।
শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন আসলেও, অর্থনৈতিকভাবে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি নেপাল। বিশ্বের দরিদ্রতম এই দেশটির অর্থনীতি বিদেশি সহায়তা ও পর্যটনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, নেপালের জিডিপির তিন ভাগের এক অংশ আসে প্রবাসী আয় থেকে। যা গেল তিন দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্যই অনেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বলেও অভিযোগ অনেকের।
আরও পড়ুন:
৩ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে অর্ধেকেরও বেশি জেন-জি বা প্রজন্ম জেডের তরুণরা। যাদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ২১ শতাংশ। যারা বরাবরই সোচ্চার ছিল দুর্বল অর্থনীতি ও সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রাজনীতিবিদ সন্তানদের বিলাসবহুল জীবন নিয়ে নেপো কিডস নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠে আন্দোলনের ঝড়। বৈষম্যের কারণে দানা বাধতে শুরু করে ক্ষোভ।
বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচার রোধে গঠিত ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স নেপালকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো তালিকাভুক্ত করেছে। এদিকে, এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেশটির ৪৪ শতাংশ মানুষের আস্থা নেই। এছাড়াও, দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে হতাশ দেশটির সাধারণ জনগণ।
দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের জেরে ছোট ছোট আন্দোলন সোমবার রূপ নেয় বড় ধরনের সহিংসতায়। যা দেশটির ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে। এবারের আন্দোলনটির নেতৃত্বে মূলত ১৩ থেকে ২৮ বছর বয়সী তরুণ প্রজন্ম।
নেপালের লেখক, চিকিৎসক, শিল্পী, সাবেক আমলাসহ বিশিষ্টজনেরা নেপাল সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন জেন-জিদের উপেক্ষা করলে পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।