নেপালি সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এসব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জেন-জি আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। একইসঙ্গে নিহতদের শহিদ ঘোষণা করে সরকার।
এছাড়া সরকার জানিয়েছে, আন্দোলনে আহত ১৩৪ জন বিক্ষোভকারী ও ৫৭ জন পুলিশ সদস্যের জন্য বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে আন্দোলনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ পর্যন্ত আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। তাদের মধ্যে ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন বন্দী ও ৩ জন পুলিশ সদস্য।
অপরদিকে, নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আটটি দল অভিযোগ করে, প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। পৌডেল সদ্য নিয়োগ পাওয়া অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেয়া।
আরও পড়ুন:
শনিবার দেয়া যৌথ বিবৃতিতে আট দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেন। তারা বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং নেপালের বিচার বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও পার্লামেন্ট ভাঙা ছিল ‘জেন-জি’ প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের অন্যতম দাবি। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এসব দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মেটানো উচিত। আগামী বছরের ৫ মার্চ নতুন নির্বাচনের ঘোষণা এরইমধ্যে দেয়া হয়েছে।
শনিবার পরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট পৌডেল সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে এই কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। তার ভাষায়, ‘সংবিধান বেঁচে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা বেঁচে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এখনো অটুট রয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ রয়েছে।’
৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি গত শুক্রবার সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তার মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির জন্য কারকি পরিচিত। ‘জেন জেড’ প্রজন্মের ছাত্রনেতারাও তার নেতৃত্বকে সমর্থন জানাচ্ছে।
তবে তার সামনে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, পুড়িয়ে দেয়া সংসদ ভবন ও সরকারি স্থাপনা পুনর্গঠন, পরিবর্তন চাইতে থাকা তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে না—এমন আস্থা সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।