প্রত্যাশার চেয়েও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ভারত

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ভোক্তা বাড়ছে ভারতের গ্রামাঞ্চলে। আর এর প্রভাবেই শেষ প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও তা মেটানোর সক্ষমতা ছাপিয়ে যাচ্ছে মার্কিন শুল্ক যুদ্ধকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তাকেও।

গেলো কয়েক প্রান্তিকে গ্রামীণ ভারতে চাহিদার শীর্ষে ট্রাক্টর আর দু'চাকার যান। বেড়েছে তুলনামূলক সস্তার নিত্য ভোগ্যপণ্য বিক্রিও। চলতি বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত আর কৃষকদের আয় বৃদ্ধির প্রভাবে দেশটির গ্রামাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে, কমছে মূল্যস্ফীতি।

গেলো দুই অর্থবছরেই ভোগ্যপণ্য বিক্রি বেড়েছে, সাথে বিনিয়োগও স্থিতিশীল। নতুন অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস অর্থনীতিবিদদের। বলছেন, গ্রামাঞ্চলে ভোগ্যপণ্য বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী হওয়া আশার খবর। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে সাড়ে ছয় শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাস ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। মূলত মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের খবরে কয়েকদিন ধরেই সুবাতাস বইছে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে। স্থিতি বজায় থাকলে চলতি বছরই চার লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি জাপানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত, আভাস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের।

নয়াদিল্লির নিতি আয়োগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিভিআর সুব্রামানিয়াম বলেন, ‘এই যে কথা বলছি, এই মুহূর্তে আমরা চতুর্থ শীর্ষ অর্থনীতি। চার লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি আমরা। আমার তথ্য নয় এটা, আইএমএফের তথ্য। আজ জাপানের চেয়েও বড় ভারত। আমাদের চেয়ে বড় কেবল যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর জার্মানি। এভাবে চলতে থাকলে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সবটা হলে, আমাদের ভাবনা মতো কাজ হলে আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অর্থনীতি হবে ভারত।’

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। আগের প্রান্তিকে ব্যক্তি পর্যায়ে আট শতাংশ খরচ বৃদ্ধির পর, বিগত প্রান্তিকেও এ হার বাড়ে ছয় শতাংশ। এই প্রান্তিকে ভোক্তাপর্যায়ে মুদ্রাস্ফীতি-সমন্বিত ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে সাত শতাংশের বেশি, যা ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ইতিবাচক প্রভাবের বাইরে নয় পুঁজিবাজারও।

একজন জানান, পুঁজিবাজারে এর ভালো প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়বে। যখন আপনি ভালো উপার্জন করতে শুরু করেন, তখন খরচ আর সঞ্চয়ে ভালো প্রভাব পড়ে। ভারসাম্য থাকে।

আরেকজন বলেন, ‘চমকে যাওয়ার মতো দারুণ ছিল খবরটা। প্রবৃদ্ধির অঙ্ক সাত দশমিক চার শতাংশ এখানকার সব মানুষের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমরা কল্পনাই করিনি যে এমন কিছু হতে পারে। সরকারের সাড়ে ছয় শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ হয়েছেই।’

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কযুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে ঝুঁকিতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রবাহ। এসবের মধ্যেই ধীরগতিতে এগিয়ে চলছে ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি। তার ওপর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও নির্মাণখাতের গতিবৃদ্ধি সমন্বিতভাবে ছাপিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ ঝুঁকির শঙ্কাকে।

ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ইনফোমেরিক্স রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনোরঞ্জন শর্মা বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির সব খাতে প্রবাহিত হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ভালো প্রভাব পড়বে, উৎপাদন বাড়বে, ক্ষুদ্র-কুটির ও মাঝারি শিল্প খাত আর ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতও ভালো করবে। জনসংখ্যার বড় অংশ এর মাধ্যমে উপকৃত হবে।’

বিশ্লেষকদের আশা, ২০৪৭ সাল নাগাদ ৩০ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে রূপ নিতে পারে ভারত। এ যাত্রায় সঙ্গী দেড়শ' কোটি জনসংখ্যার দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠী, যাদের গড় বয়স ২৮ বছর।

এএইচ