আকাশে আলোর ঝলকানি, সঙ্গে বিকট বিস্ফোরণ। শুক্রবার রাতে কিয়েভের পরিস্থিতি ছিল এমন। ড্রোন ও মিসাইলের মাধ্যমে ইউক্রেনের রাজধানীকে কাঁপিয়ে তোলে রুশ সেনারা। দুই ঘণ্টা যাবৎ গগণবিদারি শব্দে বাসিন্দাদের সতর্ক করে যায় সাইরেন। সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে হামলা মোকাবিলা করে কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হলেও প্রাণহানির তথ্য মেলেনি। ইউক্রেনীয়দের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতি চান না বলেই কিয়েভে হামলা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেনের স্থানীয় একজন বলেন, ‘তিনি যুদ্ধ শেষ করতে চান না। বাচ্চাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের কী লাভ হচ্ছে বুঝতে পারি না।’
অন্য একজন বলেন, ‘কিছু না করেও সাধারণ মানুষ হামলার শিকার হচ্ছেন। এরচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতে পারে না।’
অথচ এর কিছুক্ষণ আগেও পরিস্থিতি ছিল ঠিক উল্টো। শুক্রবার ৩৯০ জন করে বন্দি বিনিময় করে দুপক্ষ। সংখ্যার দিক থেকে যা যুদ্ধ শুরুর পর সর্বোচ্চ। ইস্তানবুলে সমঝোতা অনুযায়ী ধাপে ধাপে বিনিময় করা হবে উভয় পক্ষের এক হাজার বন্দী। বীরের বেশে সেনাদের বরণ করে নেয় কিয়েভ ও মস্কো।
বন্দি বিনিময়কে শান্তি স্থাপনের প্রথম ধাপ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অন্যদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, শীঘ্রই দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে প্রতিপক্ষের কাছে। তবে আলোচনার ভেন্যু হিসেবে ভ্যাটিকান সিটিকে নির্ধারণের বিরোধিতা করেন তিনি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘অর্থোডক্স রাষ্ট্র হিসেবে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের দেশ ভ্যাটিকান সিটিতে দুই দেশের আলোচনার স্থল নির্ধারণ অনুপযুক্ত। আমাদের মূল দাবি যুদ্ধের মূল কারণ মূলোৎপাটন করা। আর এ তালিকায় রয়েছে ইউক্রেনের অর্থোডক্স গির্জাগুলো ধ্বংস করা।’
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেন, ‘আমরা এখন প্রথম ধাপে রয়েছি। দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো এখনো সম্ভব হয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি চায়। আমাদের আশা, এটি বাস্তবায়ন করতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সাহায্য করবে।’
যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। বিপরীতে রুশ প্রেসিডেন্টের নজর বিশ্বব্যাপী মস্কোর অস্ত্র রপ্তানির বাজার বাড়ানোর দিকে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘বৈশ্বিক অস্ত্রের বাজারে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে। আমরা ১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছি। যা সামনে আরও বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর নজর দিতে হবে।’
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘তুরস্কে বৈঠকের ফল এই বন্দি বিনিময়। আমরা সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। তবে এ জন্য রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে হবে। খসড়া প্রস্তাব প্রণয়নে রাশিয়া এক সপ্তাহ পার করে ফেলেছে। যা পুরো বিশ্বের জন্য উপহাসের শামিল।’
এদিকে বুধবার পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে একটি রুশ যুদ্ধবিমান। ন্যাটোর নির্দেশে বিমানটিকে প্রতিহতের দাবি করেছে ওয়ারশ।