গণহত্যায় উন্মত্ত থাকা ইসরাইলের আগ্রাসনে গাজা উপত্যকা যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। রোববার রাতে রাফাহ'র একটি নিরাপদ শরণার্থী শিবিরে হামলা করে ইসরাইল। নিমিষেই শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তাঁবুর নিচে আশ্রয় নেয়া দুইশতাধিক বেসামরিক মানুষ পালানোর চেষ্টা করলেও অনেকেই ছিলেন ভাগ্যহত। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সোমবারও (২৭ মে) ছাইভষ্মের মাঝে প্রিয়জনদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন অনেকে। হাতড়াচ্ছিলেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সংবাদকর্মীদের সামনে পেয়ে ভয়াল রাতের বর্ণনা দিলেন কয়েকজন।
স্থানীয় একজন বলেন, 'মাগরিবের নামাজের পর বাচ্চাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করছিলাম। তখন বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। চারপাশে আগুন ছড়িয়ে গেলো। আমার প্রতিবেশি প্রার্থনারত অবস্থায় মারা গেলেন। প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় গাজা পুড়ছে। আমাদের সন্তান, আত্মীয় স্বজন, আমাদের ফিলিস্তিন প্রতিদিন পুড়ছে।'
মর্মান্তিক এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে নেতানিয়াহু জানান, রাফাহ থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেয়ার পরেও অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে প্রাণহানি হয়েছে। হামলায় হামাসের দুই যোদ্ধা নিহতের দাবি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
নেতানিয়াহু বলেন, 'রাফাহ থেকে আমরা ১০ লাখের বেশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিয়েছি। তবে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়নি। তদন্তের মাধ্যমে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।'
ইসরাইল জাতীয় জন কূটনীতি দপ্তরের মুখপাত্র এভি হেইম্যান বলেন, 'প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি দুঃখজনক। তবে এই যুদ্ধ হামাস চেয়েছে। তারাই শুরু করেছে।'
রাফায় ভয়াবহ হামলার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের নির্দেশের পরেও দক্ষিণের শহরটিতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখায় নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিকরা।
ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, 'এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। রাফায় সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধে আইসিজে'র নির্দেশের পরপরই এই হামলা হয়েছে।'
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে সাধারণ মানুষ।