পূর্ব জেরুজালেমে গোপনে বসতি নির্মাণ করছে ইসরাইল

পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের বসতি
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

গাজায় আগ্রাসন নিয়ে উত্তেজনার আড়ালে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম আর পশ্চিম তীরে গোপনে অবৈধ বসতি স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। দখলকৃত ভূখণ্ডে নতুন করে আরও ২২টি অবৈধ বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইলি নিরাপত্তা পরিষদ। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি বসতিগুলোতে সমানে চলছে আগ্রাসন ও হামলা।

পোড়া গাড়ি, ভাঙা বাড়ি. নিজেদের এলাকাতেই বাইরের দখলদারদের হানায় ভীত-সন্ত্রস্ত অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা। নাবলুসের কাছে মঙ্গলবার হঠাৎই হামলা চালায় ইসরাইলি দখলদাররা। বাড়িঘরে পাথর ছুঁড়ে ভাঙচুর চালায়, পুড়িয়ে দেয়া হয় যানবাহন।

পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ঘরেই বসে ছিলাম। বাইরেও সব শান্ত ছিল। হঠাৎ ভীষণ ভাঙচুরের আওয়াজ পেলাম, আগুন আর ধোঁয়া দেখে দরজা খুলে দেখি দখলদাররা বাড়িঘর, গাড়ি সব পুড়িয়ে দিচ্ছে আর মানুষজন মারছে।’

দুপুরের দিকে ৪০ জনের মতো মুখোশ পরা দখলদার আমাদের ওপর হামলা চালালো। গাড়ি ভাঙলো, আমার ভাইয়ের গাড়িতে আগুন দিলো। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন যে বাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। নিজেদের ঘরেও আমরা নিরাপদ নই।

জর্ডান আর ইসরাইলের মাঝখানে প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের পশ্চিম তীর কয়েক দশক ধরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে অঞ্চলটি দখলের পর থেকেই ইসরাইল পশ্চিম তীরে সামরিক অবরোধ আরোপ করে রাখলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের অনিবার্য উপাদান এই পশ্চিম তীর। কিন্তু ক্রমাগত বসতি স্থাপন করতে করতে পুরো অঞ্চলের স্থায়ী দখল নেয়ার পথে ইহুদিবাদীরা। পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে নতুন করে আবারও ২২টি বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইলি নিরাপত্তা পরিষদ। দুই সপ্তাহ গোপন রাখার পর মঙ্গলবার খবরটি নিশ্চিত করে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম।

আন্তর্জাতিক আইনে বেশিরভাগ দেশের কাছেই ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণ কার্যক্রম অবৈধ। তবে এসবের তোয়াক্কা না করেই প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আর তার কট্টর ডানপন্থি সরকার প্রকাশ্যেই পুরো অঞ্চল দখলের হুমকি দিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যেই অল্প জনবসতির উঁচু এলাকাগুলোতে দলে দলে ভেড়া চড়ানোর কৌশল নিয়েছে দখলদাররা। এক পর্যায়ে বেদুইন ও অন্যান্য যাযাবর গোষ্ঠী আর মেষপালকদের ব্যবহৃত পাহাড়ে শুরু হয় বসতি স্থাপন আর আশপাশের ফিলিস্তিনি বসতিগুলোতেও চলে হামলা।

সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আল্লাহ জানে, আমরা জানি না এখন কী করা উচিত। আমাদের বাড়িঘর কিছুই নিরাপদ না। দেখুন দখলদারদের বসতি থেকে আমার বাড়ি কত দূরে। তাও তারা এখানে আসে, হাঁটে আর মন চাইলেই সব পুড়িয়ে দেয়। কখনোই তাদের থামাতে পারি না আমরা।’

প্রায় ছয় দশক আগে পশ্চিম তীর আর গাজায় অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল। এরপর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন পিএলও'র সাথে অসলো চুক্তির আওতায় গাজা থেকে ১৯৯৪ সালে অবরোধ প্রত্যাহার করে এবং ২০০৫ সালে বসতি ভেঙেও ফেলে। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে পশ্চিম তীরের এরিয়া সি এলাকায় জমি পুনরুদ্ধারে অনুমোদন দেয় ইসরাইলি মন্ত্রিপরিষদ। পশ্চিম তীরের প্রায় ৬১ শতাংশ এলাকাই বর্তমানে পূর্ণ ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে।

এসএস