গেল ১৩ জুন ইসরাইল যখন ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়, ঠিক তার আগের দিন জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ- প্রতিবেদনে বলেছিল, পারমাণবিক সুরক্ষা সংক্রান্ত শর্ত মানছে তেহরান। ১২ দিন দুপক্ষের সংঘাতের পর গেল বুধবার (২৫ জুন) আন্তর্জাতিক এই পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ইরান।
ইরানে হামলার আগে বা পরে ইসরাইল সরাসরি একবারও দাবি করেনি- এই অভিযানের সঙ্গে পরমাণু শক্তি সংস্থার পর্যবেক্ষণের কোনো সম্পর্ক আছে। তাহলে পরমাণু স্থাপনায় হামলা করলো কেন তেলআবিব? প্রশ্ন তেহরানের। দেশটির অভিযোগ- জাতিসংঘের এই নিউক্লিয়ার ওয়াচডগের পর্যালোচনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন ওঠে, ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আসলে কী ভাবছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা? ঠিক কী কারণে এই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় ইরান?
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ মূল্যায়নের প্রটোকল না থাকলেও ২০২১ সালের চুক্তি অনুসারে নাতাঞ্জ ও ফোর্দোর মতো প্রকল্প নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং যাচাই এর ক্ষমতা ছিল আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার। ২০২৩ সালে সংস্থাটি দাবি করে ফোর্দো পরমাণু প্রকল্পে ৮৩ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের আলামত পাওয়া গেছে। গেল ৯ জুন ভিয়েনায় সংস্থাটির পরিচালক দাবি করেন তেহরানের বিধিনিষেধের কারণে পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কী না তা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে বিস্ফোরক মন্তব্য আসে ১২ জুন। ২০ বছরে প্রথমবার ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু সমৃদ্ধকরণের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ আনে সংস্থাটি। যদিও ১৩ জুন হামলার পর পরমাণু সংস্থা সুর পাল্টে জানায়, এই অভিযোগের সঙ্গে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু ২২ জুন ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট দুজনেই আন্তর্জাতিক এই সংস্থার বয়ান সামনে এনেছেন একাধিকবার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৯ থেকে ১২ জুন পরমাণু সংস্থার পরিচালক ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু সমৃদ্ধকরণের শর্ত ভঙ্গের যে অভিযোগ এনেছিলেন, তার ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তোয়াক্কা না করে তেহরানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।
ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সাইদ এমামিয়ান বলেন, ‘গেল কয়েক সপ্তাহে পরমাণু সংস্থা থেকে বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া এসেছে তা বৈধ কী না- নিয়ে প্রশ্ন আছে। ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। তেহরান বলছে, আইএইএর উচিৎ কারিগরি দিক নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। অথচ তাদের পর্যবেক্ষণ ভীষণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
সবশেষ বুধবার, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসার পর ইরানের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফের বরাত দিয়ে নুরনিউজ জানায়, সংস্থাটির প্রতিবেদনের কারণেই ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলার লাইসেন্স পায় ইসরাইল। পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়া খসড়া বিলে, আইএইএ'র নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন, পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরি স্থগিতের কথা বলা হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে রশিয়া।