বিতর্ক বা সমালোচনা পিছু ছাড়ে না ট্রাম্পের । ব্যক্তিগত থেকে রাজনৈতিক গত এক দশকে সবকিছুতেই বিতর্ক ঘিরে রেখেছে তাকে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন করে জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে। আর নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তথ্য নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের বিরোধ সামনে আসে। কংগ্রেসে তুলসী গ্যাবার্ড বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। যা ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে হামলার পরিকল্পনা করেন ট্রাম্প।
এরপরই গেল ২১ জুন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা দিয়ে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সেগুলো পুরোপুরি গুড়িয়ে দেয়ার দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প আরও বলেন, পরমাণু কর্মসূচিতে ইরান কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে। তবে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখার ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, হামলায় খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তেহরানের। পরমাণু কর্মসূচিতে তারা পিছিয়েছে মাত্র কয়েক মাস।
বিতর্ক এখানেই থামেনি। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার আগেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সরিয়ে ফেলেছে ইরান। একই দাবি করে তেহরানও। যদিও তা মানতে নারাজ ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অপসারণ খুবই জটিল এবং বিপজ্জনক। এগুলো সরাতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। এরপরই ট্রাম্পকে সত্য প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছে সিনেটসহ সিআইএ, হোয়াইট হাউজ ও প্রতিরক্ষা বিভাগ। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি গণমাধ্যম মিথ্যা ও ভুয়া খবর ছড়িয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে ট্রাম্পের অবিশ্বাসের ঘটনা এটি প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগ করেছিল, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল। পুতিনের সহযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। যদিও গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্প বলেন, স্বচ্ছ ভোটে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছেন তিনি।
২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য দিয়েছিল, পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে উত্তর কোরিয়া থাকলেও, ইরান নেই। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিষ্ক্রিয় ও নির্বোধ। তিনি আরও দাবি করেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব ভালো। ওই বছরের জুনে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া সফর করেন।
এদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী আইএস সিরিয়া ও ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার চালাতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিল গোয়েন্দারা। এসব হুমকিকে পরোয়া না করে উল্টো সিরিয়া থেকে দুই হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। আইএসআইএসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
গেল এপ্রিল মাসে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভেনেজুয়েলার অপরাধ চক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্যরা মার্কিন ভূখণ্ডে হামলার হুমকি দিচ্ছে। যাদের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও মার্কিন গোয়েন্দার ১৮টি সংস্থার মধ্যে এফবিআই ছাড়া বাকি সবগুলো সংস্থা ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলে, এই চক্রের সঙ্গে ভেনেজুয়েলা সরকারের কোনও যোগসূত্র নেই।