কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা হাজারো ভোক্তার ভিড়ে আমানত খানও একজন। সপ্তাহের বাজার করতে এসেছেন। মূল্যস্ফীতির প্রভাব যেন সব থেকে বেশি খাদ্যপণ্যে। শুধু সবজি কিনতে তার খরচ করতে হয়েছে এক হাজার টাকা। অথচ ১ বছর আগেও তিনি সবজির কিনতেন ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' এর মধ্যে।
এখন টেলিভিশনকে আমানত জানান, 'সবজির দাম শুনলে আশ্চর্য লাগে। আগে বাজারে আসলে ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' টাকার মধ্যে সবজির বাজার হয়ে যেতো। এখন সে পরিমাণ বাজার করতে এক হাজার টাকা লাগে।'
আমানত খান আরও বলেন, আগের চেয়ে বাজার করা তিনি অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছেন। তার মতো অনেকেই খাদ্যপণ্য কিনতে এসে অনেক কিছু না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য বলছে চলতি অর্থবছরের গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি করেছে নতুন রেকর্ড, ১২.৫৬ শতাংশ। যা ২০১২ সালের পর সর্বোচ্চ। আর গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৩ শতাংশ। ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত মাসিক মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল। প্রায় ১২ বছর পর গত আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে উঠে যায়। এছাড়া আগে ২০১১ সালের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.২ শতাংশ। এখন আবার তা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই অবস্থায় রয়েছে।
আরো পড়ুন:
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছে সরকারের নানা মহল। কিন্তু কিছুতেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগেই ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকে দফায় দফা বৈঠকও চলছে। তবে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না এই মূল্যস্ফীতির। কিন্তু কেন?
ক্রমাগত মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ জীবন যাত্রার মান কমাতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। এর অন্যতম কারণ রিজার্ভ কমে আসা এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'দিন দিন অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।'
মূল্যস্ফীতি সরাসরি যুক্ত ডলার সংকট, রিজার্ভ এবং খেলাপি ঋনের হারের সঙ্গে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ, অধিক যোগান এবং রেমিট্যান্সে সরকারের প্রণোদনা বৃদ্ধিসহ নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক আশানুরূপ ফল পায়নি। এই মূল্যস্ফীতির সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ছে গ্রাম অঞ্চলে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য টিসিবির পন্য আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আতিউর রহমান। তিনি বলেন, 'যেখানে আমরা খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্রামের মানুষ খাদ্য উৎপাদন করে. সেখানেই মূল্যস্ফীতি বেশি। অক্টোবরে বিশ্বে খাদ্য মূল্যস্ফীতির যে সূচক সেটা কিন্তু কমে গেছে, সেখানে আমাদের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিষয়ে পরামর্শ দিতে এসে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'আর্থিক এই পরিস্থিতিতে ডলারের দাম নির্ধারণ উপকারের চেয়ে অপকারটাই বেশি করেছে। তাই ডলারের দাম ছেড়ে দিতে হবে বাজারের হাতে।'
খুব তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসবে খাদ্যপণ্য ও মুদ্রা বাজার। এমনটাই আশা করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।