বিজি-৪৪৬ ফ্লাইটের দুর্ঘটনায় দায়ী রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি!

বিজি-৪৪৬ ফ্লাইটের খুলে যাওয়া চাকা
দেশে এখন
0

নিরাপদে বিমানের বিজি-৪৪৬ ফ্লাইটটি অবতরণ করিয়ে পাইলট-ক্রুরা যখন প্রশংসায় ভাসছেন তখন প্রশ্ন উঠেছে, উড়োজাহাজটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে উড্ডয়নের সময় বিয়ারিং কাজ না করায় খুলে পড়ে চাকা। আর অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইন লঙ্ঘন, তদন্ত কমিটির দেয়া সুপারিশ না মানা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিই এমন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

গেল ১৬ মে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকাগামী বিমানের বিজি-৪৩৬ ফ্লাইটটির উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে পড়ে যায়। ঘটনাটি কক্সবাজার বিমানবন্দরের টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে জানানো হলে তিনি ঢাকায় ল্যান্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৫০ মিনিটের উৎকণ্ঠা কাটিয়ে পাইলটের দক্ষতায় ৭৫ আরোহীসহ নিরাপদেই ঢাকায় অবতরণ করে বিজি-৪৩৬।

এই ঘটনায় পাইলটসহ ক্রুরা প্রশংসায় ভাসলেও প্রশ্ন উঠেছে বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিয়ে। ঘটনার প্রেক্ষিতে সেদিনই বিমান থেকে দু'টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে উড্ডয়নের সময় বিয়ারিং কাজ না করায় খুলে পড়ে চাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিয়ারিং ফেইলরের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু তদন্ত কমিটি কোনো রিপোর্ট দাখিল করেননি, শুধু আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে এটা বিয়ারিং ফেইলর।’

এবার প্রশ্ন হলো কেন কাজ করল না বিয়ারিং? বিমানের বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উড়োজাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইনে প্রতি ছয় মাসে ল্যান্ডিং গিয়ারবক্সের রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশনা থাকলেও তা অনুসরণ করেনি বিমান। সবশেষ দেড় বছর আগে ল্যান্ডিং গিয়ারবক্স চেক করা হয়েছিলো এই ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটির। এতে শুকিয়ে গিয়েছিল বিয়ারিংয়ের গ্রিজ। সেকারণেই উড্ডয়নের সময় চাপ নিতে না পেরে খুলে পড়ে চাকা।

২০১৭ সালে বিমানের আরেকটি ড্যাশ এইট ঢাকায় অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। সেবারও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে ল্যান্ডিং গিয়ারের বিয়ারিংয়ে ত্রুটির বিষয়টি। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সে সময়ের তদন্ত কমিটি ড্যাশ এইটের ল্যান্ডিং গিয়ার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ৭ টি সুপারিশ দিয়েছিলো। কিন্তু গেলো ৮ বছরেও সুপারিশগুলো আমলে না নেয়ার অভিযোগ আছে বিমানের উপর।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, উড়োজাহাজটির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিতেই এমন ঘটনা।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেটা অবশ্যই রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতি। ধরা যায়, তাদের প্রতিদিনের যে রুটিন চেকগুলো আছে সেগুলো তারা দেখেননি।’

তার মত, এই ঘটনায় লঙ্ঘন হয়েছে উড়োজাহাজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইনও। বিমানে জবাবদিহিতার অভাবেই এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।

নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘বিমান মেইনটেনেন্সের কিছু নিয়ম আছে, সেগুলো ফলো করতে হবে। এখন যদি তারা সেটা ফলো না করে, কাজ না করে সাইন করে দেয়, তাহলে এই ব্যাপারে প্রত্যেকে দায়ী।’

এ ঘটনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও তদন্ত শুরু করেছে।

এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকেও আমরা একটা টিম করে দিয়েছি। তারা পুরো ব্যাপারটা চেক করছেন। তারা সেরকম কিছু পেলে আমরা বিষয়টি তাদের সাজেস্ট করবো।’

মেরামত সম্পন্ন করে দুই দিন পরেই ফের চলাচল শুরু করে ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটি।

এসএইচ