প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান ঘটেছিল, তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এই স্মৃতি শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং নতুন শপথ নেওয়ার বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না আবার ১৬ বছর অপেক্ষা করে অভ্যুত্থান ঘটাতে হোক। তাই প্রতিবছর এই সময়টি আমরা স্মরণ করব, উদযাপন করব, যেন কোনো স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিতে না পারে। গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণের ঐক্য ও সচেতনতা সবচেয়ে বড় শক্তি। স্বৈরাচারের প্রথম পাতাই যেন আমরা আগেভাগে ছিঁড়ে ফেলতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে গত বছরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের; যারা গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন। সাহস, ত্যাগ ও দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।’
এই মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং যে সংস্কারের জন্য ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছেন, সেই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। আমরা চাই, জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে প্রতিটি দিনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসুন, এই জুলাই মাসকে গণজাগরণের মাসে পরিণত করি। ঐক্যের মাসে পরিণত করি। আমাদের লক্ষ্য হোক, জনগণের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক।’
আরো পড়ুন:
সবশেষে জাতির উদ্দেশে আশাবাদী কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচি সফল হোক। এর মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করা হয়। একইসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’। এ ছাড়া, নিহত শহীদদের স্মরণে দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে (মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা) বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
একই দিনে শুরু হয়েছে ‘জুলাই খুনিদের’ বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান, যা চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে একটি শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী, জুলাই মাসজুড়ে আরও কয়েকটি তারিখে কর্মসূচি পালিত হবে; যথা ৫ জুলাই, ৭ জুলাই এবং ১৪ জুলাই। উদযাপনের চূড়ান্ত দিন ৫ আগস্টকে (চিহ্নিত ‘৩৬ জুলাই’ নামে) কেন্দ্র করে হবে বিশেষ আয়োজন। সেদিন স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, বিজয় মিছিল, এয়ার শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলন গড়ে তোলে, যার চূড়ান্ত রূপ হয় ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে। এই অভ্যুত্থানই বর্তমানে ‘জুলাই বিপ্লব’ বা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত।