রেলপথে প্রথমবার লাগেজ স্ক্যানিং শুরু; কক্সবাজার-ঢাকায় বসছে আধুনিক স্ক্যানার

স্টেশনে রাখা হয়েছে লাগেজ স্ক্যানিং
এখন জনপদে
দেশে এখন
0

দেশে রেলপথে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে যাত্রীদের লাগেজ স্ক্যানিং প্রক্রিয়া। আগামী মাস থেকে কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বসানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আধুনিক স্ক্যানার। রেলপথে মাদক ও অবৈধ পণ্য চোরাচালান রোধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে কক্সবাজারের সাথে রুট চালুর পর তা আরও বেড়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে খুশি যাত্রীরাও।

আকাশপথে যাত্রীদের জন্য লাগেজ স্ক্যানিং এখন স্বাভাবিক ঘটনা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় লাগেজ স্ক্যানিং করা হয় নিয়মিত। কিন্তু অভ্যন্তরীণ যাত্রায় সড়ক কিংবা রেলপথে লাগেজ স্ক্যানিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই যাত্রীদের। তবে এবার প্রথমবারের মতো রেল ভ্রমণে লাগেজ বা ব্যাগ স্ক্যানিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যা শুরু হবে আগামী মাসেই।

আমেরিকার তৈরি ‘এস্ট্রোফিজিক্স’ ব্র্যান্ডের এই স্ক্যানারটি ইতোমধ্যে স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে। করা হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। এই স্ক্যানারে ধরা পড়বে অবৈধ মালামাল, মাদক ও চোরাইপণ্য। রেল কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী।

আর এন বি এর চীফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এ তিনটা স্টেশনে স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এতে মূলত সন্দেহভাজন যাত্রীদের লাগেজ চেক করা হবে। এবং অবৈধ মালামাল পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এড়িয়ে রেলকে পণ্য পরিবহনের বাহন হিসাবে ব্যবহার করে অপরাধী চক্র। বিশেষ করে কক্সবাজারের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় বেড়েছে মাদক পাচার। গত ছয় মাসের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাদক মামলা ও জব্দ মাদকের পরিমাণ আগের বছরের চাইতে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

২০২৪ সালে অভিযান চালানো হয় ২২,২৪৬টি। এতে ৩৩৩৩ জনকে আসামি করে মামলা করা হয় ৩০৪৪টি। এসব অভিযানে ১৫ লাখ ৫৬ হাজার পিস ইয়াবা এবং ২.২৭০ কেজি আইস জব্দ করা হয়। এদিকে ২০২৫ সালে ১১,৭৭২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ২০২৩টি মামলায় ২২৬১ জনকে আসামি করা হয়। এসব অভিযানে ১০ লাভ ৫২ হাজার পিস ইয়াবা এবং ০.৪১০ কেজি আইস উদ্ধার করা হয়।

বিষয়টি নজরে এলে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেলস্টেশনে লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. আবু জাফর মজুমদার বলেন, ‘একটা কথা আছে যে কক্সবাজার থেকে মাদক পাচার হয় বা হতে পারে। এজন্য কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এ তিনটা স্টেশনে লাগেজ স্ক্যানার বসানো হয়েছে।’

রেলস্টেশনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসাবে দেখছেন যাত্রীরা। তবে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেটি নিশ্চিতের দাবি যাত্রীদের। রেলওয়ে পুলিশ বলছে, লাগেজের পাশাপাশি সন্দেহভাজন যাত্রীকেও স্ক্যানিং এর আওতায় আনবে কর্তৃপক্ষ।

যাত্রীরা জানান, স্ক্যানার বসালে ছিনতাইয়ের প্রবণতা কমতে পারে। কক্সবাজার থেকে যে মাদক দ্রব্য পাচার হয় তাও রোধ করা যাবে বলে যাত্রীদের বিশ্বাস।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘স্টেশনগুলোতে লাগেজ স্ক্যানার বসানো প্রয়োজন। এর কারণ হলো আমরা যদি ওয়ান বাই ওয়ান যাত্রীদের ব্যাগ চেক করি তাহলে তারা খুব বিরক্ত হোন। এটা আসলে একধরনের হ্যারেসমেন্টও। এজন্য আমরা লাগেজ স্ক্যানার বসাতে চাচ্ছি।’

আপাতত পূর্বাঞ্চলে শুরু হলেও, ভবিষ্যতে দেশের সব বিভাগকে স্ক্যানিং এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রেল কর্তৃপক্ষের।

ইএ