৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ: ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ডাকাতি প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় ছিল ছাত্রজনতা

মন্দির পাহারা দিচ্ছেন আলেমরা
দেশে এখন
0

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে গত বছরের আজকের দিনে ঢাকার শৃঙ্খলার সামাল দেয় ছাত্রজনতা। ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ডাকাতি প্রতিরোধ রাতভর পাহারাসহ নানা দায়িত্ব পালন করে রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যেন মবের সৃষ্টি না হয় তার জন্য বিএনপি, জামায়াতসহ সব দলের ঐক্য চোখে পড়ে। অন্যদিকে ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম চালায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব ছড়ানোর অভিযান। এতে যেন আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে দেশের মানুষ।

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালানোর পরই বদলে যায় এ শহর। শহরজুড়ে তখন মহা তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন। দেয়ালে লিখা স্লোগান। কারো মুখে বিজয়ের হাসি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের খেয়াল খুশিমতো ব্যবহারের অভিযোগ-প্রমাণ সবই ছিলো স্বৈরাচারের তকমা পাওয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তবে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। তছনছ করা হয় গণভবন, যেখানে বসেই আন্দোলনকারীদের গুলির নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এসময়, চলে লুটপাটও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিহীন দেশে গুজব আর আওয়ামী অপপ্রচারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেসময়ও বড় ভূমিকা রাখে সাহসী ছাত্রজনতা। তাই রাতে মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে রাতভর বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মী ও ছাত্ররাও পাহারা দেন।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মাঠে নামে। তবু সুযোগসন্ধানীরা দখল ও ডাকাতির মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ায়। নানা জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে খুন ও গণপিটুনির ঘটনা, যার অধিকাংশই হয় পূর্ব শত্রুতার জেরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফি মো. মোস্তফা বলেন, ‘একটা বিপ্লবের পরে মানুষের মাঝে যে ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বিশাল রকমের অনেক কিছু হয়ে যাবে। যেভাবে ফল করেছে আওয়ামী রেজিম, রাষ্ট্রের এমন কোনো ইন্সটিটিউশন নাই যার হেডরা হয় লুকায় নাই অথবা পালায় নাই। এরকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও রাষ্ট্র কিন্তু ই লেভেলের কোনো ম্যাসাকার করেনি। এটাই এ জাতির দুর্বলতা, এটাই এ জাতির সফলতা।’

আরও পড়ুন:

৭, ৮ ও ৯ আগস্ট সারা দেশে ছাত্ররা নামে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিকের দায়িত্ব নেয় নিজের কাঁধে। দেয়ালে দেয়ালে বিজয়ের গল্প লেখে তারা। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং মন্দির-গির্জা পাহারা দিতে রাত জেগে ডাকাতি ঠেকাতে পাহারায় থাকে ছাত্রজনতা।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সমন্বয়কদের নিয়ে একটি টিম গঠন করে মন্দির পাহারা দেয়। এমনকি যাদের বাড়িতে লুট চলছিলো সেগুলোও প্রতিহত করেছে ছাত্ররা।

অন্যদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম নামে গুজব ছড়ানোর প্রতিযোগিতায়। রংপুর মহানগরী ও জেলার আট উপজেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলো পাহারা দেন বিএনপি ও জামায়াত নেতারা। পিরোজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির পাহারা দেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কালীমন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। যশোরে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে রাত জেগে পাহারা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা, গুজব ও অপতথ্য ছড়ানোয় গভীর উদ্বেগ জানান দেশের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকেরা।

এত বড় একটি গণঅভ্যুত্থানের পর আশঙ্কাজনক ক্ষতি ছাড়াই আবারও ফিরে আসে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এটি এদেশের মানুষের জন্য সহনশীলতার নজির হয়ে থাকবে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, ‘বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবেও অসাধারণ কাজ করেছে। যাতে মানুষ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে না ওঠে এটা তারা দেখেছেন। আমার মনে আছে থানা থেকে পুলিশ বের হচ্ছিলো না। একটানা তিন দিন আমরা তাদের বাহির থেকে খাবার দিয়ে এসেছি। কি অভূতপূর্ব সংযম ও দূরদর্শিতার পরিচয় বাংলাদেশের মানুষ দিয়েছে তা আসলে অভাবনীয়।’

এ অভ্যুত্থান দেশের মানুষের ঐক্যের সাক্ষী হয়, সাক্ষী হয় ফ্যাসিবাদ পতনের। স্বপ্নের শুরু হয় নতুন বাংলাদেশের।

ইএ