সমাবেশে অংশ নেয়া সংগঠনগুলো হলো ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, ব্রাইটার্স, সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পলিউশন অ্যান্ড স্টাডিজ (ক্যাপস), ক্লাইমেট ফ্রন্টিয়ার, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভস (ইআরডিএ), ইক্যুইটি বিডি, গ্লোবাল ল থিঙ্কার্স সোসাইটি (জিএলটিএস), খাসিয়া স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, ওএবি ফাউন্ডেশন, রিভার বাংলা, রিভারাইন পিপল, সচেতন ফাউন্ডেশন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, ইয়ুথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, ইয়ং ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ও থ্রিফিফটি ডট ওআরজি (৩৫০.ওআরজি)।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য দেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এসএম বদরুল আলম, এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভসের (ইআরডিএ) নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন চৌধুরী, রিভারাইন পিপলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, ইক্যুইটি বিডি এর পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, শহিদ হোসেন, সিপিআরডি এর প্রতিনিধি ইমরান হোসেন ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের গবেষণা ও বাস্তবায়ন শাখা প্রধান ইকবাল ফারুক প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকী বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই অবিলম্বে কয়লা থেকে বেরিয়ে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, যেকোনো কারণেই সুন্দরবন, ইলিশ ও লবণের মত অমূল্য সম্পদ নষ্ট করাকে কেউ সমর্থন করতে পারে না। সুন্দরবন না থাকলে সমগ্র দক্ষিণ বাংলা বিপন্ন হবে, তাই সুন্দরবন বাঁচাতে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করতে হবে। অপরদিকে ইলিশ আমাদের অমূল্য জাতীয় সম্পদ। ইলিশ চলাচলের পথ বন্ধ করে তালতলির বরিশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কলাপাড়ার পটুয়াখালী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন জাতীয় স্বার্থ ও জন আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। পাশাপাশি মাছে ভাতে বাঙালির ঘরে লবণ ছাড়া আমাদের একদিনও চলবে না। ফলে লবণ বাঁচাতে বাঁশখালি ও মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও তৎসংলগ্ন শিল্পায়ন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এসএম বদরুল আলম বলেন, ‘কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে অনেক দেশই বেরিয়ে আসার চেষ্টায় সফল হয়েছে। কিন্তু আমরা এর ব্যবহার বাড়িয়ে চলেছি।’ তিনি বিপর্যয় থেকে মুক্ত হতে সঠিক পথনকশা প্রণয়নের আহ্বান জানান।
রিভারাইন পিপলের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা কয়লা ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে, তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এখনো তারা এ ধরনের ক্ষতিকর প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা চাই এখনই কয়লা প্রকল্পগুলো বন্ধ হোক।‘
এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভসের (ইআরডিএ) নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই কয়লা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এতদিন অনেকেই সোচ্চার থাকলেও এখন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে না।’
সুন্দরবন ও উপকুল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের উপকূলের রক্ষাকর্তা। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে নদী দূষণ হচ্ছে, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, ইলিশের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে, যেমন সাতক্ষীরা ও অন্যান্য অঞ্চলে পরিবেশ দূষণের কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে।’ তিনি সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করেন।
বক্তারা বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ দূষণ, জীবিকা এবং স্বাস্থ্য সংকটের বড় কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের অজুহাতে বিগত সরকার অত্যন্ত মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বাংলাদেশ উপকূলের বাগেরহাট জেলার রামপালে একটি, বরগুনা জেলার তালতলি ও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া মিলে একটি এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার মহেশখালী ও বাঁশখালি মিলে একটি, এই তিনটি বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব বা কেন্দ্রস্থল গড়ে তুলে যা যথাক্রমে রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ি হাব নামে পরিচিত।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের নাগরিক সমাজ শুরু থেকেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই উদ্যোগসমূহের প্রতিবাদ করে আসলেও পতিত সরকার বেপরোয়াভাবে এই এলাকাসমূহে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। তন্মধ্যে মাত্র কয়েকটি কেন্দ্র চালু হতে না হতেই সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে নেমে এসেছে ব্যাপক পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয়। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থলের কারণে পশুর নদী ও সুন্দরবন আজ বিপন্ন।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থলের কারণে ইলিশ মাছ ও তরমুজ উৎপাদনে ধ্বস নেমে গেছে এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থলের কারণে লবণ ও পান চাষ চরম সংকটের মুখে পড়েছে; যা দেশের বৃহত্তর খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি তৈরির পাশাপাশি হাজার হাজার জেলে ও কৃষকের জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে।