ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক: রাজনৈতিক দলগুলো যা জানালো

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশন
দেশে এখন
রাজনীতি
0

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আজ (সোমবার, ২ মে) বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের কাছে দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের দাবি দাওয়া ও আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান। বৈঠকে ২৬ জন বক্তব্য রেখেছেন। যেখানে ২৩টি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাছাকাছি চলে এসেছি। সংবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে একমত হওয়ার জন্যই হয়ত দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। সব বিষয়ে হয়ত সবাই একমত হতে পারবো না, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন করা সম্ভব, ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ঐকমত্য বাস্তবায়ন করে কিছু সংস্কার নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব।’

এসময় তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেয়ার একটিও কারণ নেই। সবদল ডিসেম্বরে নির্বাচন করার বিষয় মত প্রকাশ করেছে। কমিশন সংস্কারের বিষয়ে আন্তরিক হলেও ইতিমধ্যে যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ করেছে।

এদিকে বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এনসিপি তিনটি বিষয়ে কথা বলেছে। যার মধ্যে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসেই যেন জুলাই সনদ ঘোষণা করা হয়, জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের তারিখ যেন ঘোষণা না করা হয়।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘১৫ বছর অপেক্ষা করেছি, ১০ মাস অপেক্ষা করেছি নির্বাচনের জন্য আর দুটি মাস যেন সবাই অপেক্ষা করি অনুরোধ জানিয়েছি সবাইকে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপি আস্থা রাখতে পারছে না, তাদের অধীনে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়।’ সেই সঙ্গে দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংস্কারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি করেছি। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে।’ এছাড়াও দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট মাস জানতে চাওয়া হয়েছে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এ তিনটি কাজে গুরুত্ব দিতে হবে, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন।’

তিনি আরো বলেন, ‘নারী কমিশনের কিছু বিষয় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তা কোনোভাবে গ্রহণের সুযোগ নেই।’

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বাইরের আগ্রাসী শক্তি দেশকে গ্রাস করতে চায়, ড. ইউনূস তাদের গলার কাটা তাই তাকে যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘দেশে যা পরিস্থিতি তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আগে পরিপূর্ণ সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে পরিস্থিতি ঘোলা হবে। আগের মত নির্বাচন যেন আর না হয়।’ নির্বাচন করেই প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। কারণ মানুষের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হচ্ছে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করলে অনাস্থা কাটবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের দূরত্ব মানুষের মাঝে শঙ্কা তৈরি করছে। শঙ্কা কাটাতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছে। বিএনপি ডিসেম্বরে এবং জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চেয়েছে।’

আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়গুলো কি কি সংস্কার করেছে তাদের জবাবদিহিতার জন্য কাজের খতিয়ান প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছি। দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সময়ের চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বেশি।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জুলাইয়ের মধ্যে সকল সংস্কার করতে হবে। অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। যেগুলোয় ঐকমত্য হচ্ছে না এসবে কাছাকাছি আসা যাবে আশা রাখি।’

তিনি বলেন, ‘সকল দল প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তার অধীনেই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি জানান, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলে জামায়াত নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বলেছে। এরমধ্যে হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে। কোন নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে রিজিড থাকা ওয়াইজ ডিসিশন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রবাসী ভোটারদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে আন্তরিক কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে ধীরগতিতে আগাচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত আগানোর অনুরোধ জানিয়েছি।’

এএইচ