অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার শীর্ষে ছিলো জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের রোডম্যাপ। অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটলো একই দিনে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির বিকেলে আসে ঘোষণাপত্র। তার ৩ ঘণ্টা পর পাওয়া যায় নির্বাচনের আয়োজনের আভাস। রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন।
প্রধান উপদেষ্টার কাঙ্ক্ষিত ঘোষণার পরও রাজনীতির মাঠে ‘যদি’, ‘কিন্তু’ রয়েছে। নতুন দল এনসিপি বলছে, সব পক্ষকে সন্তুষ্টির প্রয়াস ছিলো ঘোষণাপত্রে, তাতে কিছু ঘাটতিও পরিলক্ষিত। আর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কার্যকর হয়নি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে এবং সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে যাতে ঘোষণাপত্র দেয়া যায়, সেটার একটা প্রচেষ্টা এ ঘোষণাপত্রে আছে। একদফার ঘোষণা কে দিয়েছে বা কখন হয়েছে, এটাকে একনলেজ না করার জন্যেই প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীগুলো ফেয়ার ইলেকশনের জন্য প্রস্তুত নয়। মাঠও প্রস্তুত নয়। যদি এর মধ্যে প্রস্তুত হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব।’
আর এবি পার্টি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে, নির্বাচন যাতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে হয়, সে আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের অনুরোধ হলো, নির্বাচন যেন জুলাই সনদের ভিত্তিতে হয়। এতে আমাদের বিভেদ কমে আসে, সুষ্ঠু বিচার এবং সনদ বাস্তবায়ন, সংস্কার করে আমরা যেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে পারি, এটাই প্রত্যাশা।’
শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করার আহ্বান জামায়াতে ইসলামীর। মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলেও দাবি দলটির।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সংস্কারকে একটি আইনি কাঠামোর ভেতর না নিয়ে আসলে এ ঘোষণা শুধু ‘‘চমকপ্রদ’’ হিসেবেই থেকে যাবে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, সরকার শহিদদের তালিকা শেষ করতে পারেনি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে যদি সরকার নিয়ে না আসতে পারে, এখনো যেভাবে চাঁদাবাজি চলছে, এগুলো থেকে মুক্ত না হলে কখনোই আমরা এ জায়গায় যেতে পারবো না।’
এদিকে বিএনপি বলছে, সরকারের নিরপেক্ষতা ধরে রাখলেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণায় ষড়যন্ত্রের শঙ্কা কমে আসবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘যখনই দেখবে নির্বাচিত সরকার আসছে কাজেই এ মুহূর্তে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে ধরা খেলে আর বাঁচার উপায় নেই। কাজেই তখন এগুলো কমে আসবে। নিরপেক্ষতা নষ্ট না হলে তো কোনো সমস্যা নেই। আশা করবো উপদেষ্টা বা আশপাশে যারা আছেন তারা যেন প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না করে।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন আয়োজনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছাও জরুরি।