এলডিসি উত্তরণ: বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভাবনা বনাম রপ্তানি চ্যালেঞ্জ, প্রস্তুতি কতটা

এলডিসি উত্তরণে নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
অর্থনীতি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে বাংলাদেশ। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। তবে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানিপণ্য ও শিল্পে ভর্তুকি দেয়ার সুবিধা কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশকিছু কিছু কৌশল নেয়া গেলে সহজেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দিন নির্ধারণ করা আছে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। এই উত্তরণে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিন সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক মানদণ্ডের তিনটিতেই উত্তীর্ণ হয়। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ চূড়ান্ত সুপারিশ পায় যে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হতে পারে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে প্রস্তুতির জন্য আরো দুই বছর পিছিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ যদি এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হয়, তাহলে বাংলাদেশই হবে প্রথম দেশ, যারা তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়ে বের হবে।

এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে প্রস্তুতি নিতে হবে। জোর দিতে হবে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক সুরক্ষায়। ১৯৭৫ সালে এলডিসি তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য-সুবিধাসহ নানা সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ।

এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ইস্যুতে ওষুধশিল্পে নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হবে।

বেড়ে যাবে ওষুধের দাম এবং এতে রপ্তানি বাজারও কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশি সহযোগী সংস্থার সহজশর্তের ঋণ ও অনুদান সহায়তা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। রপ্তানি পণ্য ও শিল্পে ভর্তুকি দেয়া বাতিল করতে হবে।

এলডিসি উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বেশি সুদে হলেও ঋণ নিয়ে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে অধিক খরচ করা সম্ভব হবে।

সেক্ষেত্রে বেশকিছু কিছু কৌশল নেয়া গেলে সহজেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য একসাথে সব সুবিধা বাতিল না করে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে চুক্তির মাধ্যমে সুবিধা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনা, নজরদারি, খবরদারি এইগুলো আমাদের চলমান রাখতে হবে। তা যদি না করতে পারি তাহলে বাড়তি যখন আরেকটা চ্যালেঞ্জ আসবে তখন তো এইটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত নিয়ে আসবে।’

অপরদিকে প্রতিযোগিতা ও বিদেশি বিনিয়োগ বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য বাজার স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে যদি ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, তাহলে এই এলডিসি থেকে উত্তরণে পরে আমদানি বিপরীতে যে নিরাপত্তা আছে তা কমানোর যে বাধ্যবাধকতা আছে। তা কিন্তু ভোক্তার জন্য ইতিবাচক।’

যেসব সূচকের ওপর ভিত্তি করে এলডিসি উত্তরণ হয়, তা বেশ সুসংহত। কিন্তু অর্থনীতির কিছু সূচক পতিত আওয়ামী লীগের আমলে ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। যদি এগুলো সংশোধন করা হয় তবে এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।

সেজু