বড়াইবাড়ীতে বিডিআর-বিএসএফ সংঘর্ষের চব্বিশ বছর পূর্তি আজ

বড়াইবাড়ী সংঘর্ষের ২৪ বছর পূর্তিতে স্মৃতিসৌধে পুষ্প অর্পণ ও আলোচনা সভা
এখন জনপদে
0

বড়াইবাড়ী দিবস আজ (শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল)। বিডিআর ও বিএসএফের মধ্যে লোমহর্ষক সংঘর্ষের চব্বিশ বছর পূর্তি। মাত্র ৮ জন বিডিআর সদস্য আর গ্রামের অধিবাসীরা একত্রিত হয়ে চার শতাধিক বিএসএফ সদস্যদের হামলা ঠেকিয়েছিল। তাদের পাল্টা আক্রমণে ১৬ জন বিএসএফ সদস্যের লাশ ফেলে পালিয়েছিল আক্রমণকারী বিএসএফ সদস্যরা। তাইতো সেই বীরত্ব গাঁথার দিনটি নানা অনুষ্ঠান আয়োজনে স্মরণ করেছেন সেখানকার মানুষ।

বিগত ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোররাতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চার শতাধিক সদস্য নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালিয়েছিল। নির্বিচারে আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে দিয়েছিল নিরীহ মানুষের ৮৯ টি বাড়িঘর।

রৌমারী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বড়াইবাড়ী বিওপিতে ছিলেন মাত্র ৮ জন বিডিআর সদস্য। খুব ভোরে খেতে সেচ দিতে থাকা কয়েকজন অধিবাসী বিএসএফ সদস্যদের আসতে দেখে ফেলেন। সেচ দিতে থাকা অধিবাসীদের মধ্যে একজন দৌড়ে গিয়ে বিডিআর বিওপিতে খবর দেন।

এরপর বিএসএফ সদস্যরা অতর্কিতে বিডিআর বিওপিতে হামলা চালায়। কিন্তু আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকা বিডিআর সদস্যরা গ্রামবাসীদের বিশেষ করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কয়েকজন আনসার সদস্যকে সাথে নিয়ে এই হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।

বিডিআর আর স্থানীয় অধিবাসীদের যৌথ পাল্টা জবাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা। নিহত হয় ১৬ জন বিএসএফ সদস্য। তাদের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা।

সেদিন শহীদ হয়েছিলেন ৩ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৫ জন বিডিআর সদস্য। এদের মধ্যে শহীদ হয়েছিলেন ৩৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক ওহিদুজ্জামান, সিপাহি মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সিপাহি আব্দুল কাদের। এছাড়া আহত হন হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহি হাবিবুর রহমান ও সিপাহি জাহিদুর নবী।

এছাড়াও বিএসএফের তাণ্ডবে ওই ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯টি বাড়ি। সরকারি তৎকালীন হিসাবে মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ টাকা।

এদিকে বড়াইবাড়ী সীমান্ত সংঘর্ষের ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শুক্রবার স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে এই দিবসটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বড়াইবাড়ী সংঘর্ষে বিডিআরের সাথে অংশগ্রহণকারী আনসার কমান্ডার ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জয়নুল আবেদীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) সাঈদ, বীর প্রতীক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোশাররফ, মেজর (অব.) ফারুক, বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমান ও আজিজুর রহমান প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তারা দ্রুত বড়াইবাড়ী দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি জানান।

এসএইচ