নেত্রকোণা শহরকে ঘীরে রেখেছে মগরা নদী। তবে দখল-দূষণ আর ময়লার কবলে প্রাণ হারাচ্ছে শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত এই নদী।
নেত্রকোণা পৌরসভায় দিন দিন বাড়ছে মানুষের বসতি। শহরের আবর্জনা ফেলার জন্য বাহিরচাপড়া এলাকায় ৩.০৫ একর জায়গায় ছয় কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে স্যানিটারি ল্যান্ড ফিলের অবকাঠামো নির্মাণ করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালে এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন পৌর মেয়র। এরপর এক বছর পার হলেও এখনও আলোর মুখ দেখেনি বহুল কাঙ্ক্ষিত এই প্রকল্প।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এই ল্যান্ডফিলটা কোনো কাজ হচ্ছে না। অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। প্রতিদিন শতশত টন বর্জ্য নেত্রকোণার রাস্তার আশেপাশে ফেলা হচ্ছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে, মাছির জন্ম হচ্ছে। ধোঁয়া যাচ্ছে রুমের ভেতরে এর ফলে মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছে।’
ল্যান্ডফিলটিতে ময়লা আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপন করার কথা থাকলেও তার কিছুই হয়নি। শুধু কোটি টাকায় নির্মিত ভবন রয়েছে যার ভেতরে এবং বাইরে ফেলা হচ্ছে মেডিকেল থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সকল প্রকার বর্জ্য। এই বর্জ্য পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। এছাড়া তীব্র দুর্গন্ধ তো আছেই। এর প্রভাবে একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য ও প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে তেমনি সামাজিক কার্যক্রমেও দেখা দিচ্ছে বিপত্তি। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ক্ষতির মুখে পড়ছে এলাকার জমি বেচাকেনা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি বাসা করে বাসাভাড়া দিতে পারছি না। কারণ কী? পৌরসভার লোকজন যে এটা আবাসিক এলাকার ভেতর করলো, টা করা কি তাদের উচিত হয়েছে?’
অন্য একজন বলেন, ‘বর্ষাকাল আসলে একহাঁটু পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। ময়লা ধোয়া পানি যখন রাস্তায় নামে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। এছাড়া অন্য রোগ তো আছেই।’
এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটিতে আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণের যন্ত্রপাতি না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই এর কার্যক্রম শুরু করতে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
নেত্রকোণা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যদি প্রকল্প থেকে আমাদের ল্যান্ডফিলটাকে ফাংশনিং করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেন তাহলে আমরা হয়তো এটা ফাংশনিং করতে পারলে এই দুর্ভোগ থেকে আমরা অনেকটা লাঘব করতে পারবো।’
১৮৮৭ সালের প্রতিষ্ঠার পর নেত্রকোণা পৌরসভাকে ১৯৯৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এই শহরটিতে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস।