হাওর প্রান্তরে আতঙ্কের আরেক নাম বজ্রপাত। ফাঁকা মাঠ এবং হাওর অঞ্চলগুলোতে বজ্রপাতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আর এই বজ্রপাতেই নেত্রকোণার হাওরে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
নিজাম উদ্দিন, মাত্র ২৫ বছর বয়সে খালিয়াজুর রসুলপুর ঘাটে বজ্রপাতে নিহত হন। ছেলে মৃত্যুর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন মা ফরিদা বানু। এমন আরও অনেক পরিবার হারিয়েছে তাদের স্বজনদের এই বজ্রপাতে। নিহত নিজাম উদ্দিনের মা ফরিদা ভানু ও ভাই শেখ ফরিদ জানান, নিজাম উদ্দিন কাজ থেকে ফেরার পথে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেন।
চলতি বছর একদিনই খালিয়াজুরি হাওরে বজ্রপাতে তিনজন সহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২০১৯ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বজ্রপাতে পুরো জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬২ জনের। এরমধ্যে বেশির ভাগই কৃষক।
২০২১ সালে খালিয়াজুরিতে একটি বজ্রপাত নিরোধক আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার। কিন্তু তারপর দীর্ঘ চার বছরেও আর এগোয়নি প্রকল্পটি। হাওয়ার তোড়ে হারিয়ে গেছে উদ্বোধনের সেই ফলকও। এছাড়া রসুলপুর ঘাটের গুচ্ছগ্রামে তালগাছ রোপণের নামে পালন করা হয়েছিল কর্মসূচি, কিন্তু একটি ও চারার দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, বড় গাছগুলি না থাকায় বজ্রপাতের সমস্যা বেড়েছে। বজ্রপাত নিরোধক আশ্রয়কেন্দ্রের প্রকল্প নিলেও তা বাস্তবায়ন হয় নি। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।
পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জের হাওরে যেখানে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কিছু লাইটনিং অ্যারেস্টার, সেখানে নেত্রকোনার চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। এছাড়া খালিয়াজুরিতে মাত্র ২টি, মদনে ২টি, আর মোহনগঞ্জে ৩টি অ্যারেস্টার। আর পুরো জেলায় ৩৬ টি লাইটনিং অ্যারেস্টার থাকলেও কত গুলো সচল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে এলাকাবাসীর মাঝে।
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে সবচেয়ে বেশি ঝড় বৃষ্টি হয়। আর এই সময়টায় একমাত্র ফসল কাটা ও মারাই মৌসুম থাকায় ঝুঁকি নিয়েও হাওরে নামেন লাখো মানুষ। তবে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জীবনের নিরাপত্তায় কতটুকু পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন এমন প্রশ্ন হাওরবাসীর।
তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, হাওরের চার উপজেলায় বজ্রপাত প্রতিরোধে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘জেলা পরিষদের আওতায় আমরা চারটি উপজেলায় আপাতত চারটি ছাউনি আমরা নির্মাণ করবো। সেটার একটা স্ট্রাকচার ও আমরা পেয়েছি কি ধরনের ছাউনি হতে পারে।’