বর্ষা এলেই আতঙ্ক মনপুরায়; প্রশ্নবিদ্ধ কোটি টাকার বাঁধ প্রকল্প

ভোলায় বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারদের অনিয়মের অভিযোগ
এখন জনপদে
0

নদীঘেরা দ্বীপ জেলা ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। যেখানে বর্ষা মানেই আতঙ্ক, ভাঙন মানেই ঘরছাড়া হওয়ার ভয়। মনপুরাকে রক্ষায় ৩ বছর আগে ( ২০২২ সালে) ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যেখানে হওয়ার কথা ছিল ৫২ কিলোমিটর বাঁধ, ১৭১টি সাব মার্সিবল স্পার, ৩৭ কিলোমিটারে জিও ব্যাগ ও টিউব ডাম্পিং আর ১০টি স্লুইচ গেট। কিন্তু কাজের গুণগত মান, ঠিকাদারদের অনিয়ম নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও সামনে এসেছে। অভিযোগ আছে, বাঁধের নকশাও বদলেছে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় এই বাঁধ নির্মাণ কাজ। এরপর থেকেই কাজের মান নিয়ে উঠে নানা প্রশ্ন। স্থানীয়রা বলছেন, নিম্নমানের বালু, সিমেন্ট পরিমাণে কম, বাঁধের পাশেই কাটা হচ্ছে মাটি, বাঁধের উচ্চতা ও পরিধি প্রকল্পের সাথে মিল না রেখেই চলছে কর্মযজ্ঞ। ৫২ কিলোমিটার এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। ১৭টি প্যাকেজে এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে কাজ শুরু করেছে ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ।

অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ঠিকাদার প্রতিনিধিরা জানান, কিভাবে প্রসিডিউরে ডাম্পিং হচ্ছে, কিভাবে মোটা বালু বা ৮০% রিটেইন করা বালু নিশ্চিত হচ্ছে কি না তা আমরা দেখাতে পারবো যেকোনো সময়। যার ফলে এ অভিযোগগুলো সত্য নয়।

এলাকাবাসী জানায়, পানি আর বস্তা একসাথে ভরে ফেলে দেয়া হয়। কিছু বস্তা ভরে আবার কিছু বস্তা না ভরেই রেখে দেয়া হয়। যেখান থেকে বালু উঠানো হচ্ছে সেখানেই আবার বস্তাগুলো ফেলছে। যেখানে সিসি ব্লক দেয়ার কথা সেখানে বস্তার ভেতরে বালি রাখা, এখানে সিমেন্টের কোনো অংশই নাই। এ এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। ব্লক ফেলার কথা ছিলো অথচ তারা সেখানে সস্তা বস্তা ফেলে রাখছে।

বাঁধ নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়দের নানা প্রশ্ন ও প্রতিবাদের পরেও থেমে থাকেনি ঠিকাদারি ‘সিন্ডিকেট’। অভিযোগ আছে, সম্প্রতি অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারদের হামলায় ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে পাল্টে ফেলা হয়েছে বাঁধের নকশা। প্রকৃত ভাঙনপ্রবণ এলাকা বাদ গেছে পরিকল্পনা থেকে। এমনকি একাধিক জায়গায় কাজ শুরু না হতেই ধসে পড়েছে বাঁধ।

নিহতের স্বজনরা জানান, সে (নিহত ব্যক্তি) অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। এজন্য তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই কি তাকে মেরে ফেলতে হবে? আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ কাজটা সঠিকভাবে হচ্ছে না। এটা নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বাঁধা দিতে গেলে একজন নিহত হয়।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কোন অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, ‘একটা পক্ষ এরইমধ্যে পার্সেন্টেজ নিয়ে গেছে। আরেক পক্ষ পার্সেন্টেজ নিয়ে সাব কন্ট্রাক্ট দিচ্ছে। যে মানের বেড়িবাঁধ হওয়ার কথা সে মানে হচ্ছে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আইডব্লিউসিএম এই অ্যালাইমেন্টগুলো ঠিক করেছে। কারণ আমাদের যে ডাটা রয়েছে সেগুলোর ওপ্র ভিত্তি করেই এ অ্যালাইমেন্টগুলো ঠিক করা। কোথায় করলে সাসটেইন হবে সেভাবেই এগুলো ঠিক করা হয়েছে। হুট করে আমরা এগুলো কোথাও সরিয়ে দিতে পারবো না।’

ইএ