অযত্নে পড়ে ডেমো ট্রেন, বন্ধ আরও চার জোড়া: দুর্ভোগে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা

কুমিল্লা
বিকল হয়ে পড়ে আছে ডেমো ট্রেন
এখন জনপদে
0

কুমিল্লা থেকে স্বল্পআয়ের যাত্রীদের জন্য চালু হওয়া দ্রুতগতির ডেমো ট্রেনের সংকট দূর করতে পারছে না রেলওয়ে। অযত্ন-অবহেলায় বিকল হয়ে পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। খসে পড়ছে যন্ত্রাংশ। এদিকে আগে থেকেই কুমিল্লা-নোয়াখালী-চাঁদপুর রুটেই বন্ধ হয়েছে আরও চার জোড়া ট্রেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা।

তিন কোচ ও দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ডেমো ট্রেনটির পুরো শরীরজুড়ে শুধুই মরিচা। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় সিট, পাখা ও দুই ইঞ্জিনের ভাঙাচোরা অংশ। চলাচল বন্ধের মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই তদারকির অভাবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের ডেমো ট্রেনটি ক্রমেই পরিণত হচ্ছে কঙ্কালে।

২০১২ সালে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছিল ২০টি ডেমো। খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৬ শ’ কোটি টাকা। ৩০ বছর সেবা দেয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালে মাত্র ৮ বছরেই বিকল হয়েছে প্রায় সবগুলো। কুমিল্লা অঞ্চলে চালু হওয়া চার সেট ডেমোর সবই এখন অচল। ডেমোগুলো মেরামতের সক্ষমতা না থাকায় আবারও ভোগান্তিতে পড়েন এ অঞ্চলের যাত্রীরা।

সাধারণ যাত্রী হিসেবে ট্রেনে আসা সাংবাদিক তারেকুর রহমান বলেন, ‘একটা ট্রেন অনেকজন যাত্রী একসঙ্গে নিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু এখন ট্রেন না থাকায় আমাদের বাসমুখী হতে হচ্ছে। আমাদের ইমারজেন্সি কোথাও যেতে হবে, ওই মুহূর্তে ডেমো ট্রেন থাকলে আমরা সুবিধাটা পেতাম।’

কুমিল্লা-নোয়াখালী ও কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটে ২০ জোড়া ট্রেন এবং কুমিল্লা-ঢাকা ও কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রুটে ৩৪ জোড়া ট্রেনসহ লোকাল ও আন্তঃনগর মিলিয়ে মোট ট্রেন ছিল ৫৪ জোড়া। এরমধ্যে পাঁচ বছরে বন্ধ হয় ১৮ জোড়া ট্রেন। যার মধ্যে ডেমো রয়েছে চার জোড়া।

বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে আন্তঃনগর ও লোকাল মিলিয়ে মোট ৩৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও তাতে চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ পূরণ হয়। বাকিরা বাধ্য হয়েই সড়কপথ ব্যবহার করেন। গেল অর্থবছরে পূর্বাঞ্চলে এই চারটি রুটে টিকিট বিক্রি হয় ২০ কোটি টাকার। আর চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার টিকিট।

রেলপথ এখনও স্বল্প আয়ের মানুষের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এই রুটগুলোতে রয়েছে ট্রেনের সংকট। যেই কয়েকটি চলছে তাও ধুকছে লোকবল সংকটে। তবে যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডেমো বন্ধ হওয়ায়। তাই এসব রুটের যাত্রীদের ভোগান্তিও বেড়েছে কয়েকগুণ।

কুমিল্লা লাকসাম জংশনের স্টেশন মাস্টার ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেক যাত্রীরা আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়াত করতে পারে না। স্বল্প খরচে তারা ভ্রমণ করতে চায়।’

স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডেমোগুলোতে যথেষ্ট আর্নিং ছিল আগে। এখন ভবিষ্যতে যদি গাড়ির ব্যবস্থা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ করে, তাহলে মোটামুটি যাত্রীর চাহিদা এটা কভার করবে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের করিডর খ্যাত কুমিল্লায় এমনিতেই চাহিদার তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা অপ্রতুল। তার উপর ডেমো বন্ধে সেই সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

লাকসাম জংশনের লোকশেড ইনচার্জ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এটা নষ্ট। চাঁদপুর রোডে তো কোনো ট্রেনই নেই। নোয়াখালীর দিকেও কোনো ট্রেন নেই।’

কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ‘ডেমোগুলো যদি পুনরায় মেরামত করা হয়, তাহলে আমার মনে হয় যাত্রীদের চাহিদাটা পূরণ হবে। স্বল্প ব্যয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো আবার শুরু করা যাবে।’

যথাযথ প্রাযুক্তিক জ্ঞান ও দক্ষ জনবল না থাকায় কুমিল্লার চার সেট ডেমো মেরামতের চেষ্টাই করেনি মন্ত্রণালয়। তাই স্থায়ীভাবে অচল হয়ে কুমিল্লার লাকসাম ও চট্টগ্রামের লোকশেডে পড়ে আছে ট্রেনগুলো।

ইএ