বরিশাল সিটিতে ২৩ বছরেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন নেই, দুর্ভোগে নগরবাসী

বসতবাড়ির পাশেই ময়লার ভাগাড়
এখন জনপদে
0

২৩ বছরেও আধুনিকায়ন হয়নি বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দুর্গন্ধ আর দুর্ভোগে নগরীর পুরানপাড়া, সাপানিয়া, সরদারকান্দাসহ অন্তত ১০টি এলাকার বাসিন্দারা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা মাফিক উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ পরিবেশবিদদের।

অসংখ্য পলিথিন, কাগজ, খাবারের উচ্ছিষ্টসহ এলাকাজুড়ে ময়লার উৎকট গন্ধ। কুকুর, শূকর, কাকসহ বিভিন্ন প্রাণীর সেই বর্জ্য নিয়ে টানাটানি। দুর্গন্ধে নাক-মুখ চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা।

২০০৩ সালে কাউনিয়া পুরানপাড়া এলাকার ছয় একর জায়গা ময়লা ফেলার জন্য অধিগ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। এরপর ২০০৪ সাল থেকে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা শুরু হয় এখানে। ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বরিশাল নগরে প্রায় ৮ লাখ মানুষের বাস। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যা সংগ্রহের পর কাউনিয়া পুরানপাড়ার এই ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে ফেলা হয়।

এ ডাম্পিং ষ্টেশনের চারপাশে রয়েছে পুরানপাড়া, সরদারকান্দা, রাঢ়িমহল, শ্রীপুর কলোনি, মতাশার, কাউনিয়া হাউজিংসহ বেশ কিছু আবাসিক এলাকা। ভাগাড়ে উন্মুক্তভাবে ময়লা ফেলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে।

এলাকাবাসী জানান, এ সমস্যার কারণে স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ এলাকার মানুষ। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ হাঁপানি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

খোলা ডাম্পিংয়ের কারণে পাশের সাপানিয়া খালের পানিতে গিয়ে মিশছে বর্জ্য। এতে দূষিত হচ্ছে পানি। পাশাপাশি অপরিকল্পিত বর্জ্য পরিবহন ও নিষ্কাশনে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে।

আরও পড়ুন:

বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনে কথা বলেছিলাম। তারা আশার আলো দেখিয়েছে যে সেটা স্থানান্তরিত হবে। কিন্তু কবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা মনে করি পরিকল্পনার মাধ্যমে এ ময়লাগুলো ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এ সমস্যা একটি সমাধানে চলে আসবে।’

এদিকে, বরিশাল মহানগরীর বর্জ্য অপসারণে কাজ করছে প্রায় আড়াইশ পরিচ্ছন্নতা কর্মী। বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৭টি ট্রাক ও ১৩০টি বক্সভ্যান। সিটি করপোরেশন বলছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা হচ্ছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক রায়হান কাওসার বলেন, ‘ক্লাসিফিকেশন করে যেগুলো অরগানিক থাকবে সেগুলোকে আমি জৈব সারে কনভার্ট করবো। যেগুলো ইনঅরগানিক থাকবে সেগুলোর মধ্যে কিছু থাকবে রিসাইকেলেবল। যেগুলো রিসাইকেল করা সম্ভব সেগুলো রিসাইকেল করবো আর যেগুলো করা যাবে না সেগুলো পুড়িয়ে দেব। পুড়িয়ে যে হিটার উৎপাদন হবে তা দিয়ে হয় আমি ক্রিস্টাল ওয়াটার তৈরি করবো অথবা বিদ্যুৎ তৈরি করবো যা দিয়ে স্ট্রিট লাইট চালাবো।’

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের আশপাশে রয়েছে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি কলেজসহ অন্তত ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১০-১২টি মসজিদ। এই ময়লার ভাগাড় দ্রুত সরিয়ে নেয়া না হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ইএ