তুলা থেকে সুতা আর তা থেকে কাপড়। পুরোটাই হাতে তৈরির প্রক্রিয়া হস্তশিল্প। তুলার গোলা নিয়ে নাটাইয়ের মতো চরকা ঘুরিয়ে হাতে তৈরি হয় খাদিসুতা। এরপরে হাতের তাঁতে চলে বুনন। রূপ নেয় খাদিকাপড়ে। এটাই খাদির বৈশিষ্ট্য।
যে খাদিতে ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কুমিল্লা। পেয়েছেন এবার জিআই স্বীকৃতিও। ব্রিটিশ খেদাও- স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠা এই খাদি শতবছর পর ২৫-এ এসে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। সদন প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বাসিত কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ এখন চান খাদির ঐতিহ্য রক্ষায় এবং বিদেশি বাজার তৈরিতে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।
ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘খাদি হচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সম্পদ।’
আরেকজন বলেন, ‘খাদিতে ঐতিহ্য। পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি।’
এদিকে যে খাদিতে দেশ-বিদেশে সমাদৃত কুমিল্লা, সে খাদি এখন বিলুপ্তির পথে। তুলা, সিল্ক ও পশমের সংমিশ্রণে তৈরি বিশুদ্ধ খাদি সংকটে পড়ার কারণ প্রধান কাঁচামাল তুলার অভাব। একই সঙ্গে রয়েছে দক্ষ কারিগর ও পুঁজির অভাবও। তাই সংকুচিত হয়ে আসছে হাতে বুনা খাদির বাজার। আর সেটি দখলে নিচ্ছে শুরু মাত্র সিল্ক ও পশমের উপকরণে তৈরি যান্ত্রিক খাদি।
একসময় কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও বুড়িচংসহ এ অঞ্চলের হাজার হাজার তাঁতি খাদি কাপড় তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যাদের হাত ধরে খাদির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ সারা বিশ্বে। স্বদেশী পোশাক হিসেবে জায়গা করে নেয় কুমিল্লার খাদি।
দিন দিনই তাদের সংখ্যা কমছে এখন আছেন মাত্র ৭টি তাঁতি পরিবার। তাদের কাছে নেই হাতে বুনা খাদি তৈরির তুলা। কারিগররা পরিবর্তন করছেন পেশা। তাঁতিরা ধুঁকছেন পুঁজি সংকটে। উৎপাদন নেমে শূন্যের কোঠায়। বাজার হারাচ্ছেন ঐতিহ্যের খাদি। তাই শেষ প্রজন্মের তাঁতিদের দাবি আদিখাদির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। তা না হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আদিখাদি হয়ে থাকবে শুধুই ইতিহাস।
তাঁতিদের একজন বলেন, ‘আমাদের সবই আছে তবে তাঁতের কাপড়ে দাম পড়ে বেশি। এই কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সবাই।’
রাষ্ট্রীয় এ স্বীকৃতি খাদি প্রেমীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে মনে করেন প্রবীণ ব্যবসায়ী ও ইতিহাসবিদরা। তারা বলেন, খাদির গুণগতমানের ক্ষেত্রে ক্রেতার যে আবেদন তৈরি হয়েছে, তা ধরে রেখে বাজার প্রসারিত করা ও ঐতিহ্য রক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে।
কুমিল্লা খাদি ঘরের প্রবীণতম খাদি ব্যবসায়ী প্রদীপ রাহা কান্তি বলেন, ‘খাদিকে কীভাবে দেশের বাহিরে মার্কেটিং করা যায় সেই চিন্তা করা। এই ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের সব থেকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।’
কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, মনোহরপুর ও লাকসাম রোড রামঘাটলা এলাকায় খাদির দোকান রয়েছে তিন শতাধিক । চাহিদা বাড়ার সঙ্গে খাদি কাপড়,রং, ডিজাইন বৈচিত্র্যে এখনও অনন্য।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে খাদির তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বাসিত। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে যে খাদি পৌঁছে যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তবে দেশ প্রেমের অনবদ্য দলিল আদিখাদি এখন নানামুখী সংকটে। ঐতিহ্য রক্ষায় সংকট উত্তরণে দ্রুত প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি এ শিল্পের তাঁতিদের।