পারিবারিক আর্থিক নিরাপত্তা আর দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার ভার কাঁধে নিয়ে এভাবেই দিনরাত শ্রম দেন প্রবাসীরা। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সেই চলছে পরিবারের খরচ, সন্তানদের পড়াশোনা; এমনকি গ্রামের অর্থনীতিতেও ঘটেছে বড় পরিবর্তন। কর্মজীবী প্রবাসীরা যেন দেশের অর্থনীতির নীরব সৈনিক ।
দেশটিতে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী রেমিট্যান্সকে নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায় । বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মে মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স গেছে ৪ হাজার ১৬৪ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়া থেকে এটিই ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। আর প্রথমবারের মতো প্রবাসী আয়ের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ওঠে আসলো মালয়েশিয়া। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের মে মাস থেকে মালয়েশিয়ার রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারায় গর্বিত প্রবাসীরা। তবে প্রাপ্তি নিয়ে আছে আক্ষেপ। তারা জানান, টাকা পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংসারিক খরচ। এছাড়াও কিছু টাকা সঞ্চয় রাখেন যাতে ভবিষ্যতে কিছু করা সম্ভব হয়। প্রবাসে যাওয়ার সবারই কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। কেউ হয়তো বাড়ি করবে, কেউ গাড়ি করবে অথবা অন্য কোনো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইনভেস্ট করবে।
এদিকে, দেশিয় রেমিট্যান্স হাউজগুলো বলছে, জুন মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে যা চলতি মাসেও ঊর্ধ্বমুখী। প্রায় পাঁচ লাখ নতুন কর্মীদের প্রবেশ, প্রবাসীদের ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরা ও দেশ থেকে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণে আসা এর অন্যতম অনুঘটক।
এনবিএল মানি ট্রান্সফারয়ের প্রধান নির্বাহী মো. হায়দার আলী মুর্তুজা বলেন, ‘বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর একটা ঘোষণা দিয়েছিল যে, এখন থেকে সবাই বৈধ পথেই টাকা পাঠাবেন। এখন পর্যন্ত তারা দেশের ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে বৈধ পথেই টাকা পাঠাচ্ছেন।’
এ ধারা অব্যাহত রাখতে হুন্ডির লাগাম টানাসহ প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও হাইকমিশন থেকে প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
হায়দার আলী মুর্তুজা আরও বলেন, ‘যেসব শ্রমিকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন, তারা যেন সমস্যাগুলো থেকে দ্রুত বের হতে পারে, এ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, টাকা পাচারের রমরমা বিষয়টা যেন বাংলাদেশে আর কখনো না হয়। এটা যদি না হয়, তাহলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়তেই থাকবে।’
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবারই দেশটির অবস্থান ছিল পঞ্চম। তবে মে মাসে উঠে এসেছে চতুর্থ স্থানে।
জানুয়ারি: ১,৮৮৪.৩৭ কোটি টাকা (পঞ্চম); ফেব্রুয়ারি: ২,২৪৩.১৭ কোটি টাকা (পঞ্চম); মার্চ: ৩,৫৪৯.০৯ কোটি টাকা (পঞ্চম); এপ্রিল: ২,৫৭২.৯৩ কোটি টাকা (পঞ্চম); মে: ৪,১৬৪.৬৪ কোটি টাকা (চতুর্থ)।