স্বাচ্ছন্দ্যময় যাতায়াত নাগরিকের অন্যতম চাহিদা। একইসাথে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ভরশীল যোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর। তাই বাজেটে পণ্যের দাম বাড়া বা কমার পরেই অনেকের আগ্রহের জায়গা যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের বরাদ্দ নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ খাতটিতে ১১ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের পাঁচ বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে। গেল অর্থবছরে ১৮ হাজার ৭২ কোটি টাকার বরাদ্দ এবার নেমে এসেছে ১১ হাজার ৯৪৪ কোটিতে। এরপরই রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। যা পাঁচ হাজার ৬৯৫ কোটির থেকে বরাদ্দ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৫ কোটিতে। সেতু বিভাগের বরাদ্দ গেল অর্থবছরের তুলনায় কমেছে এক হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এছাড়া ৯৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের। সব বিভাগে বাজেট কমলেও সামান্য বেড়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। ৩৮ হাজার ১৪৩ কোটি থেকে বেড়ে ৩৮ হাজার ৪৯৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বরাদ্দ।
অর্থনীতিবিদ ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশের অবকাঠামোগত বিষয়টা মোটামুটি একটু সুরাহা যদি হয়েও থাকে কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থার পরিস্থিতি আমাদের দেশে আসলে খুবই খারাপ। এ ব্যাপারে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কী করা হবে আমি জানি না। কিন্তু বেশকিছু নীতিগত বিষয়ে এখানে সরকারের কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখতে পারছি না।’
বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আগেই আভাস দিয়েছিল বরাদ্দ কমার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটির বরাদ্দ কমে ২২ হাজার ৫২০ কোটি টাকায় নেমেছে। এরমধ্যে বেশি কমেছে বিদ্যুৎ বিভাগে। ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা কমে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৪২ কোটি টাকায়। তবে বাজেট কমলেও বিদ্যুতের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎখাতে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘শিল্প উন্নয়ন, শিল্প উৎপাদন এবং শিল্প স্থাপনের স্বার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিষয়ে সরকারকে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে। এটার একটা স্থায়ী সমাধান করতে হবে।’
এদিকে, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন খাতের বরাদ্দও কমেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। স্থানীয় সরকার বিভাগে গেল বছরের বরাদ্দ ছিল ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪২ হাজার ৪৩৩ কোটি। পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে গেল বছরের বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৪৭। এবার কমে হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১ হাজার ৪০০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ টাকা। এই খাতে মোট বরাদ্দ ৪৭ হাজার ৯৫২ কোটি থেকে ৪৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নেমেছে।