চামড়াশিল্প, কাঁচামালের দিক থেকে তৈরি পোশাকশিল্পের পুরো বিপরীত। কারণ পোশাকশিল্পের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে, অন্যদিকে দেশেই পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে কাঁচা চামড়ার। তবুও পোশাকশিল্পের মতো বিকশিত হয়নি চামড়াশিল্প। কেন এমন দশা?
দেশে কোরবানির ঈদে অনেকটাই মূল্যহীন হয়ে যায় চামড়া। অথচ উল্টো প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বা এক হাজার কোটি টাকার চামড়া আমদানি করে জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ বিশ্বে নামিদামি কোম্পানিগুলো পরিবেশ সনদ ছাড়া এলডব্লিউজি না থাকলে সে প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করে না।
তবে দেশের মাত্র ৬টি ট্যানারি আছে যাদের এ পরিবেশ সনদ আছে। কিন্তু তাদের পক্ষে জুতা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর চামড়ার বিপুল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়না। ফলে দেশের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানি করতে হয়।
রিফ লেদারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাদের আরো ফ্যাকটরি দরকার। কারণ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যারা প্রোডাকশন করছে, বেশিরভাগ আসছে দেশের বাইরে থেকে। আমরা কম্প্লায়ান্স ইস্যুতে সাপ্লাই দিতে পারছি না।’
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ এর জুলাই থেকে ২০২৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে চামড়া রপ্তানি হয়েছে ১০৭ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিলো ১১৭ মিলিয়ন। রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।
তবে এ বছর চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমলেও, চমক এসেছে চামড়ার জুতা রপ্তানিতে। এক বছরে চামড়ার জুতা রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলারের।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া আমদানি কমিয়ে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে ট্যানারিগুলোর পরিবেশ সনদের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ৬টির বিপরীতে ভারতে এমন প্রতিষ্ঠান আছে অন্তত ১৩৯টি, চীনে ১০৩টি, ইতালিতে ৬৮টি এবং ভিয়েতনামে ১৪টি।
সনদ না থাকায় দেশের চামড়া সস্তায় বিক্রি হচ্ছে চীনের বাজারে। কমছে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ।
রিফ লেদারের পরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘চাইনিজ ক্রেতারা আমাদের এখান থেকে একটা সুবিধা নিচ্ছে, যেহেতু আমরা আমাদের এখান থেকে অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারছি না কারণ, আমাদের এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট নাই। অলটারনেটিভ কাস্টমার না থাকায় আমাদের চায়নার কাছে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যেটা আমরা দেড় ডলারে বিক্রি করতে পারবো, সেটা অর্ধেক দামে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। অন্তত ২০ ট্যানারি ও এলডব্লিউজি সার্টিফাইড হলে আমরা দ্বিগুণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।’
দেশে চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আজহা। এ সময় বৃহত্তর চট্টগ্রামের আড়তদাররা প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।
কিন্তু চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পেয়ে আড়তদার, কোরবানি দাতা, ট্যানারি মালিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সরকার প্রতি বছর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। এতে করে বিদেশি বায়াররা দাম জেনে যাওয়ায় তাদের সাথে দরকষাকষির সুযোগ আর থাকে না বলেও দাবি ট্যানারি মালিকদের।