পাটের তৈরি সুতা যাচ্ছে ইউরোপে

শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

পাট ও পাটজাত পণ্য এবং দ্রব্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় বলে পাট বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হয়। শৈশবে পাট প্রসঙ্গ এলেই ঠোঁটস্থ্য উত্তর দেয়ার এমন অভিজ্ঞতা সবারই আছে। তবে একে একে সরকারি পাটকল বন্ধসহ নানা কারণে ধূসর হতে থাকে সোনালি আঁশ পাটের সোনালি সেই দিন। পাট শিল্পের সেই সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আশা জাগিয়েছে নর্থ বেঙ্গল গোল্ডেন ফাইবার অ্যান্ড ডাইভারসিফাই জুট মিলের মতো বগুড়ার একাধিক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পাট থেকে বিশেষ ধরনের সুতা তৈরি হচ্ছে কারখানাগুলোতে। পাশের দেশ ভারত ছাড়াও রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাহিদা তৈরি করেছে এখানকার পাটের সুতার।

৪ থেকে ৫২ পাউন্ডের পুরু সুতা ছাড়াও পাটের বস্তা ও বিভিন্ন পাটজাতপণ্য তৈরি করছে বগুড়ার মা ট্রেডার্স, হাসান জুট মিল, বগুড়া জুট মিলসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কোন ধরনের জটিলতা ছাড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। গুণ ও মান ভালো হবার কারণে বগুড়ার মিল-কারখানাগুলোতে তৈরি পাটের সুতা ও পাটজাত পণ্য দেশের বাইরে সুনাম অর্জন করেছে বলে দাবি রপ্তানিকারকদের।

বগুড়া থেকে পাটের সুতা ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করলেও সব প্রতিষ্ঠান বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে সার্টিফিকেট অব অরিজিন নেয় না। বগুড়া চেম্বার বলছে, যে ক'টি প্রতিষ্ঠান এখান থেকে সনদ নেয় তাদের তথ্যমতে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ছয় বছরে ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ১৭৭ দশমিক ৮৬ ডলারের পাটের সুতা, বস্তা ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে বগুড়া থেকে। যার বেশিরভাগ রপ্তানি হয়েছে ভারতে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের পাটের মান অনেক ভালো হওয়ায় পাট থেকে উৎপাদিত সুতা ও পাটজাত অন্যান্য পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে দেশের বাইরে। তারা বলছেন, দক্ষ শ্রমিকের অভাব দূর করে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো গেলে পাট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ আরো বেশি সুগম হবে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, 'আমরা বেশিরভাগ পাটপণ্য রপ্তানি করে থাকি ভারতে। অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করে থাকি। রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রথমে আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো পাটের উৎপাদন বাড়াতে হবে।'

জেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, 'পাট উৎপাদন মৌসুমে আমরা পাটের বীজ, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার দিয়ে দেই। পাশাপাশি তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্যও আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।'

পাটজাত পণ্য রপ্তানির ফলে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সোনালি অতীত ফিরে পাবে সোনালি আঁশ, বলছে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর। তবে পাট থেকে তৈরি কারুপণ্য তৈরির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ ও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ের তাগিদ অনুভব করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

এ ব্যাপারে মাহফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, 'বহির্বিশ্বে পাটজাত পণ্যের অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে। তবে এসব পণ্য বানাতে কারিগরদের অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। তারজন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে এটি আরো অনেক সহজ হতো। কারিগরদের প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে, পাটপণ্য রপ্তানি করা আরো সহজ হবে। বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রা আয়।'

আব্দুল হালিম জানান, 'পাটের দাম অবশ্যই বাড়বে। আর তা হলে কৃষকরাও লাভবান হবে এবং পাটচাষে আগ্রহী হবে।' আর কাঁচাপাটের চেয়ে পাটপণ্য রপ্তানিতে দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

গত অর্থবছরে ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জন হয় ১১ হাজার ১৬৭ হেক্টর। আর চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর। পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার দাবি-চাহিদার তুলনায় পাটের বীজ কম থাকায় চোরাই পথে নিয়ে আসা বীজ দিয়ে পাট চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কৃষক। এখন বগুড়ায় বীজ উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় সেই সংকট কেটেছে জানান আব্দুল হালিম।

বহির্বিশ্বে এখানকার পাটের সুতা, বস্তা ও পাটজাত পণ্যের ছড়িয়ে পড়া সুনাম রক্ষা করতে পারলে আগামীতে আবারো পাটের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা।

এসএসএস