পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহ: অপচয় রোধের পাশাপাশি বছরে সাশ্রয় আড়াইশ’ কোটি টাকা

চট্টগ্রাম
পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ
পরিষেবা
অর্থনীতি
0

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ প্রকল্পের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে। সফল হলে জুলাইয়েই বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ শুরু করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহের নতুন যুগে প্রবেশ করবে প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের অপচয় ও চুরি রোধের পাশাপাশি এতে বছরে সাশ্রয় হবে আড়াইশ’ কোটি টাকা।

দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন। তিনটি বিপণন কোম্পানির আমদানি করা এই জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশ পরিবহন করা হয় নৌপথে। এটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি ১৮০টি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে ৫০টি ডিপোতে জ্বালানি সরবরাহ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এতে বছরে বিপিসির ব্যয় হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

এছাড়া ট্যাংকার থেকে জ্বালানি তেল নিঃসরণে দূষিত হয় নদী। সবমিলিয়ে সাশ্রয়ী ব্যয়ে দ্রুত জ্বালানি পরিবহনে ২০১৮ সালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাইপলাইনে এই তেল পরিবহনের প্রকল্প নেয় বিপিসি। নানা জটিলতা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে গেল মার্চে শেষ হয় আড়াইশ’ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাইপ লাইন ও স্টোরেজ ট্যাংকসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। ওই মাসেই বাণিজ্যিকভাবে পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহের কথা থাকলেও টেলিকমিউনিকেশন ও অটোমেশনের কাজ শেষ না হওয়ায় সম্ভব হয়নি।

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ‘এখন আমাদের বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ২৫০ কিলোমিটার একটা পাইপলাইন। এটা কিন্তু অটোমেশন, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম, পিএলএসি মিলে করা। সবকিছু বুঝিয়ে দেয়ার জন্য একটু সময় লাগছে।’

গত ২২ জুন থেকে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত ট্রায়াল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পদ্মা অয়েলের ডেসপাস টার্মিনাল এবং পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির স্টোরেজ ট্যাংকার থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লায় অবস্থিত ডিপোতে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে সাত দিনে পাঠানো হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি লিটার ডিজেল। আগামী বুধবার (২ জুলাই) পর্যন্ত চলবে এই কার্যক্রম।

সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাই থেকেই বাণিজ্যিকভাবে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে বলে প্রত্যাশা বিপিসি চেয়ারম্যানের। এতে জাহাজে করে জ্বালানি তেল পরিবহনের ঝামেলা মুক্ত হবে বিপিসি।

আমিন উল আহসান বলেন, ‘প্রতিদিন জাহাজে করে তেল নিয়ে নিয়ে আমাদের গোদনাইলে যেতে হতো। এটা নিয়ে অনেক সংবাদ হতো। এই জিনিসটা আর বাংলাদেশের ইতিহাসে থাকবে না, বিপিসির ইতিহাসে থাকবে না। এটা অটোমেশন। এখান থেকে তেল ঢুকবে, ওখানে বেরিয়ে যাবে।’

বর্তমানে নদীপথে অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। পাইপলাইনে পাঠাতে লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় পাইপলাইন থেকে জ্বালানি তেল চুরির সুযোগ থাকবে না। সেই সঙ্গে কমবে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লস ও পরিবেশ দূষণ।

সিডিপিএলের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক বলেন, ‘এটা আমাদের সুবিধা, লস কম হবে। পরিবেশবান্ধবভাবে আমরা তেল পরিবহন করতে পারবো। পরিবহন করতে বছরে আমাদের ইস্টিমেট ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। আর আমাদের সাশ্রয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। এখন তো রেট আরও বাড়ছে, সুতরাং আমরা বছরে ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবো।’

২৭ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পদ্মা অয়েলের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর- ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড। তবে পরবর্তীতে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হবে নবগঠিত পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (পিটিসি) পিএলএসিকে।

এসএস