আফগানদের তথ্য ফাঁস; যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তায় বিপর্যয়কর একটি সিদ্ধান্ত!

আফগানিস্তানের রাস্তায় টহল দিচ্ছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সৈনিকরা, ৭ নভেম্বর, ২০০৭
এশিয়া
বিদেশে এখন
0

আশ্রয়প্রার্থী আফগানদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপর্যয়কর একটি সিদ্ধান্ত ছিল বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে তালেবান সরকারের ভয়ে যারা দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ায় চটেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া- আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

২০২২ সালে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন কয়েক হাজার আফগান। এরমধ্যে ১৯ হাজার আফগান অভিবাসন প্রত্যাশীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয় ভুল ঠিকানায় ইমেইল পাঠানোর জেরে। এ ঘটনার নয় মাস পর এই আফগান শরণার্থীদের জন্য খোলা হয় গোপন পুনর্বাসন কেন্দ্র। আর প্রকল্পের আওতায় ব্রিটেনে পাড়ি দেন সাড়ে চার হাজার আফগান। এই তথ্যফাঁস কেলেঙ্কারি জনগণের কাছে গোপন রাখতে সুপার ইনজাংশন আইন জারি করে তৎকালীন প্রশাসন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাতে। গেল মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায়ে তুলে নেয়া হয় এই নিষেধাজ্ঞা। প্রকাশ্যে আসে পুরো কেলেঙ্কারি।

এখন প্রশ্ন উঠছে কীভাবে এই স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হলো, এর জেরে কী ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আফগান শরণার্থীরা?

আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে ১৮ হাজার ৭০০ আফগান অভিবাসন প্রত্যাশীর তালিকা পায় যুক্তরাজ্য। আবেদনকারীদের আত্নীয়সহ এই তালিকায় ছিলেন মোট ৩৩ হাজার আফগান। অসাবধানতাবশত এই তালিকাটি সরকারি সিস্টেমের বাইরে পাবলিক ডোমেইনে থাকা একটি ভুল ঠিকানায় ইমেইল করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে অপসারণ করা হলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেনি যুক্তরাজ্যের পুলিশ। কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসনও। এরপর, ২০২৩ এর আগস্টে বিষয়টি জনসাধারণের সামনে আসে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। কিন্তু তখনও বিষয়টি নিয়ে এত জলঘোলা হয়নি।

২০২৩ এর ফেসবুক পোস্ট ও তালেবান প্রতিশোধের আশঙ্কার জেরেই ২০২৪ সালে আগফান রেস্পন্স রুট প্রকল্পের মাধ্যমে তালিকায় ফাঁস আফগানিস্তানের অভিবাসন প্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুযোগ দেয় ব্রিটিশ সরকার, যদিও এই আফগানরা জানতেন না তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। কারণ ২০২৩ এ ফেসবুক পোস্টে সুনির্দিষ্ট ৯ জনের তথ্য ফাঁস করা হয়। আর ব্রিটিশ সরকারও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিশেষ আইন করে ফেলে।

গুরুতর এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করা কিংবা বিষয়টি নিষ্পত্তিতে গঠনমূলক কোনো পদক্ষেপ না নেয়াকে তৎকালীন প্রশাসনের উদাসীনতা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাদের অভিযোগ, আফগান আশ্রয়প্রত্যাশীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন ব্রিটেনের শাসকগোষ্ঠী।

লন্ডন লি ডে এর আইনজীবী সিন হুম্বার বলেন, ‘যা হয়েছে তা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। শুধু স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়েছে এমন না, তথ্যের কারণে আশ্রয় প্রত্যাশীদের বিপদে পড়তে হবে, তাদের জীবন প্রভাবিত হওয়ার আশাঙ্কাও আছে। এই তখ্য ফাঁসের ফলে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

এরইমধ্যে আফগান নাগরিকদের সুরক্ষায় ফাঁস হওয়া তথ্য টেলিভিশনে সম্প্রচারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আদালত। তবে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়া ছাড়াও এই আফগানরা তালেবান হামলার শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্টারমার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তালেবান সরকারের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া ৬০০ এর বেশি আফগান সেনা ও তাদের পরিবারের অন্তত এক হাজার ৮০০ সদস্য।

এসএস