সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও রয়েছে কঠোর অবস্থানে। এবার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮ পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী হয়েছেন। ভোটার রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার। প্রতিটি হলে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনসিসি, প্রক্টরিয়াল টিম দায়িত্ব পালন করছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বহু বছর পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় তাদের মধ্যে আলাদা উৎসাহ কাজ করছে। তাদের প্রত্যাশা, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবেন তারা। সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রতিনিধি বাছাই করবেন তারা।
ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা গেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালে টিএসসি কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি বুথে ভোট দিতে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে ছয় মিনিট সময় লাগছে।
ভোটের বুথে প্রবেশের আগে থেকেই অনেক ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে এসেছেন। এর কারণ হিসেবে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সিদরাতুন মোনতাহা, সায়মা তাসনিম নিশাত এবং তাসনিয়া আহমেদ জানান, এতগুলো প্রার্থীর মধ্য থেকে সঠিক প্রার্থীকে বেছে নেয়া বেশ কঠিন। তাই তারা আগের রাতেই ভিপি ও জিএসসহ অন্যান্য পদে কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করে এসেছিলেন। ফলে তাদের ভোট দিতে মাত্র সাত মিনিট সময় লেগেছে।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হুমাইরা জারিন তালুকদার জানান, বুথে প্রবেশ করার পর তার ভোট দিতে ছয় মিনিট সময় লেগেছে। একইভাবে, ডিজাস্টার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী আফিফা বিনতে আওয়াল বলেন, ‘এবার সত্যিই উৎসবমুখর পরিবেশে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ভোট দেয়া গেছে।’ তার সর্বোচ্চ ছয় মিনিট সময় লেগেছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাজরীন জাহান মুনিয়া জীবনের প্রথম ভোট দিয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘জীবনে প্রথম ভোটটা দিলাম, দেখা যাক কতটুকু কাজে লাগে।’
তিনি আশা করেন, এ নির্বাচনের সফল সমাপ্তি জাতীয় নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, তিনি চান নির্বাচিত প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবেন এবং ভবিষ্যতে গণরুম-গেস্টরুমের মতো সমস্যাগুলো আর ফিরে আসবে না।
মুনিয়া জানান, কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের জন্য আলাদা ব্যালট বাক্স ছিল এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অত্যন্ত সহায়ক ছিলেন। যেহেতু তিনি আগেই তার পছন্দের তালিকা সাজিয়ে এনেছিলেন, তাই তার ভোট দিতে সর্বোচ্চ সাত মিনিট সময় লেগেছে।

এ নির্বাচন ঘিরে ইতিবাচক মনোভাব শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রার্থীরাও এই পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার জানান, ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন। তিনি আশ্বস্ত করেন, কোনো অপ্রীতিকর পরিবেশের সুযোগ নেই এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে খুঁজে নেবেন।
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল মনোনীত সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক ও সুন্দর রয়েছে। কাল থেকে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। সবকিছু স্বাভাবিক ও সুন্দর। শেষ পর্যন্ত যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, তাহলে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। শিক্ষার্থীরাও উৎসাহ নিয়ে ভোট দিচ্ছেন। এ ধারা বজায় থাকলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ ফলাফল আসবে।’
ছাত্রদল প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ভোটটা উদযাপন করতে চাই। অভিযোগ করতে চাই না। ফেসবুক পোস্টে আবিদুল ইসলাম খান লেখেন, ‘জীবনের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলছি, আমাদের ছেড়ে যাবেন না, যেভাবে ছেড়ে যাইনি ৫ আগস্টে। প্রিয় বাংলাদেশ! আমাদের দুআতে রাখুন।’
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহ সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমরা চাই এখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগোচ্ছি না। আমরা ফলাফল বর্জনের মতো কোনো অবস্থানে নেই। বরং আমরা চাই সঠিকভাবে যেন নির্বাচন সম্পন্ন হয় এবং সেই অনুযায়ী ফলাফল আসে। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। সবাই আসছে, ভোট দিচ্ছে। আমরা চাই এভাবেই যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলতে থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ৩৯ হাজার ৮৭৫টি ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা। কার্জন হল কেন্দ্র ৫ হাজার ৭৭টি ভোট, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র ৪ হাজার ৮৫৩টি, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ৫ হাজার ৬৬৫টি ভোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্র, ৪ হাজার ৭৫৫টি, সিনেট ভবন কেন্দ্র ৪ হাজার ৮৩০টি ভোট, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬ হাজার ১৫৫টি ভোট, ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্র, ৪ হাজার ৪৪৩টি ভোট, ইউ ল্যাব স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৪ হাজার ৯৬টি ভোট রয়েছে।