অন্ধকার যদি চোখে নেমে আসে, তবে কি আলোর স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়? আলোর সন্ধানী হৃদয় অন্ধকারকেও হার মানায়। তাই ডাকসুর মঞ্চে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। তারা তাদের প্রতিবন্ধকতা নয়, দৃঢ় সংকল্প কথা বলছে।
রাইসুল ইসলামের নেই দৃষ্টিশক্তি, কিন্তু মেধার আলোয় উজ্জ্বল তার জীবন। পড়াশোনায় সবসময় ছিলেন এগিয়ে। ছাত্র রাজনীতির মাঠেও তিনি ছিলেন সরব। জুলাই আন্দোলনের দিনগুলোতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন সহপাঠীদের সাথে। বিজয় একাত্তর হলের এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবার ডাকসুতে সদস্য পদে লড়ছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে। তার স্বপ্ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন অনুভব করে, এ ক্যাম্পাসও তাদের জন্য।
রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকসুতে নির্বাচিত হয়ে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসকল শিক্ষার্থীরা পড়ে, যারা চাহিদাসম্পন্ন তাদের নিয়ে কাজ করা। সে সেন্স থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করাটাই মুখ্য বিষয়। করতে পারলে, যেহেতু একটা প্যানেলের হয়ে লড়ছি, তাহলে আমরা একটা কাজ অবশ্যই করতে পারবো। আমরা যখন চলাফেরা করতে যাই তখন আমাদের অনেককিছু সম্মুখীন হতে হয়। ক্যাম্পাসে সাইকেল, রিক্সা, বাইক নিয়ন্ত্রিত ওয়েতে নিয়ে আসা।’
চোখের ক্ষীণ আলো থামিয়ে দিতে পারেনি ইবনু আহমেদকে। শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের এ শিক্ষার্থী বহুদিন ধরে লড়ে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। ডাকসুর প্যানেলে ছাত্রদলের প্রার্থী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তিনি। তার প্রত্যয় একদিন প্রতিবন্ধী আর অপ্রতিবন্ধীর ভেদরেখা মুছে যাবে, শিক্ষাঙ্গন হবে সবার জন্য সমান।
আরও পড়ুন:
ইবনু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অ্যাক্সেসেবল নয়। বিশেষ করে লাইব্রেরি ও অন্যান্য যে কাঠামোগুলো রয়েছে সে জায়গাগুলোতে কিন্তু র্যাম্প নেই। র্যাম্প না থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কিন্তু প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হয়নি। এছাড়া প্রতিটি ভবনে কিন্তু অ্যাক্সেসেবল ওয়াশরুম নিশ্চিত করা যায়নি। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মশালা গ্রহণ করবো যার মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সবাইকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে চাই।’
বিজয় একাত্তর হলের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন, জন্ম থেকেই দুই পা ভিন্ন। কিন্তু সেই পা দিয়েই অতিক্রম করেছেন জীবনের সব বাধা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছেছেন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবার চ্যালেঞ্জ ডাকসু নির্বাচন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে চান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই এক শতাংশ শিক্ষার্থী, যারা প্রতিবন্ধী, তারাও এ সমাজের শক্তি। তাদের জন্য সুযোগ, সুবিধা আর সম্মান নিশ্চিত করাই হবে তার লড়াই।
ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ভর্তির ক্ষেত্রে এক শতাংশ কোটা দেয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। এ শিক্ষার্থীদের কোটা ব্যবস্থা দেয়ার পর যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, তখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ প্রশাসন নিশ্চিত করে না। অনেকগুলো হলে এখনও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশেষ সমস্যা।’
তিনটি ভিন্ন জীবন, তিনটি ভিন্ন গল্প, কিন্তু লক্ষ্য একটাই অধিকার, মর্যাদা আর স্বপ্নের সমান ভাগ। হয়তো, এ প্রার্থীদের পদক্ষেপই একদিন বদলে দেবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।