ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন প্রাণবন্ত রূপ কবে কে দেখেছে? রাজনীতির নানা পথ, মতাদর্শিক লড়াইয়ের তুমুল বাকবিতণ্ডা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভাঁজে, চায়ের আড্ডায়, ক্যাফেটেরিয়া থেকে হলের বারান্দায় কিংবা সবুজ ঘাসে আলোচনা সভার সবকিছু জুড়ে আছে ডাকসুর অপেক্ষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এই ডাকসু এক আরাধনার নাম। যে আরাধনা ধরা দিবে আগামীকাল ভোটের ব্যালটে প্রার্থী নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে।
এমন এক ডাকসু নির্বাচন পেতে বছরের পর বছর এখানকার শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরেছে পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে। অপেক্ষা করতে হয়েছে একটি রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের। কাল সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮ টি ও হল সংসদে ১৩ পদে মোট ৪১ টি ভোট প্রয়োগ করার মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সুষ্ঠু ডাকসু নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকলেও তাদের প্রত্যাশা নিরপেক্ষ ডাকসুর।
ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন আশা করছি সুষ্ঠু হবে। কারণ এটা বাংলাদেশের ২৪-এর অভ্যুত্থানের পর প্রথম একটা ডেমোক্রেটিক ইলেকশন হচ্ছে। সবার মনোযোগ এদিকে আছে।
ভিপি প্রার্থী মো. জামাল উদ্দীন খালিদ বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ভোটের দিন একটু উত্তেজনা তৈরি হয়, রেজাল্ট বের হয়। কেউ মানে, কেউ মানে না। এটাকে আমি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখি।’
ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমি আশা করি কোনো ম্যানুপুলেশন হবে না।’
জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, ‘এটা ভোটের দিন সকালে বুঝা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা আচরণবিধি নিয়ে অনেক কথা বলেছি। প্রত্যেক প্রার্থীই বলেছে।’
ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটা চমৎকার বার্তা দেব। এর মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্রে একটা স্থায়ী রূপের দিকে যাব।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যিনিই নেতা নির্বাচিত হবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাকেই মেনে নেয়ার কথা বলছেন এসব প্রার্থীরা। জয়ী না হলেও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিজেদের নিবেদিত রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তরুণ এ নেতারা।
ভিপি প্রার্থী শামীম বলেন, ‘যেই ভিপি নির্বাচিত হবে আমরা প্রত্যেকে যারা ভিপি পদে দাঁড়িয়েছিলাম তাকে সহযোগিতা করবো।’
মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘আমি ছাড়া অন্য কেউ হলেও আশা থাকবে আমি যে কাজগুলো করে এসেছি সেগুলো সে শেষ করবে।’
উমামা ফাতেমা বলেন, ‘যেই আসুক না কেন তারা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্ভ করতে পারে।’
তানভীর বলেন, ‘নির্বাচন মডেল নির্বাচন হলে আমরা ওয়েলকাম করবো, কেউ ব্যাঘাত ঘটালে আমরা প্রতিহত করবো।’
ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘হারা জেতা কোনো প্রশ্ন না। নির্বাচনে জুলাই শহিদদের যে আকাঙ্ক্ষার যে প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি এটা আমাদের সবচেয়ে বড় তৃপ্তির বিষয়। এখানে যে জিতুক বা হারুক আমরা সবাই জিতে যাব।’
এদিকে নির্বিঘ্নে ডাকসু সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৮টি ভোট কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ভোট দিবেন শিক্ষার্থীরা। কোন হলের শিক্ষার্থীরা কোন কেন্দ্রে ভোট দিবেন সেসবও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটার ভোট কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে ভোট প্রদানে সময় পাবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ভোট কেন্দ্রের পর্যাপ্ততা, সময় নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশন।
চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের দিন আমাদের ৭ থেকে ৮টা এন্ট্রি যেখানে আছে সেখানে যাদের আমরা বৈধ পাস দেব তারা শুধু ক্যাম্পাসে ঢুকবে এবং ভোট দেবে। বোট অবজারভ করবে। এর বাইরে কেউ আসার কথা না।’
শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস উপহার দিতে প্রার্থীরা নানা কৌশলে ভোট চাইলেও ভোটারদের দৃষ্টি প্রার্থীদের প্রতিটি পদক্ষেপে।