লম্বা, সরু নাকের ফ্যাকাশে বাদামি রঙের এই কুমির বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত সরীসৃপদের মধ্যে একটি। বর্তমানে কুমিরের সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতির মধ্যেও অন্যতম ওরিনোকো।
বিপন্নপ্রায় এই কুমিরের বাসস্থান ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ায় প্রবাহিত ওরিনোকো নদীর অববাহিকায়। এর চামড়া বেশ মূল্যবান হওয়ায় চোরাকারবারিরা কয়েক দশক ধরে এটি শিকার করে আসছে। শুধু তাই নয়, ভেনেজুয়েলার বাসিন্দারা এই কুমিরের মাংস ও ডিম খেতে পছন্দ করে বলে প্রায়ই অবৈধভাবে এগুলো শিকার করে থাকে।
ফলে দিন দিন দেশটিতে কমছে ওরিনোকো কুমিরের সংখ্যা। ভৌত, গাণিতিক এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ফুডেসির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ভেনেজুয়েলার বন্যাঞ্চলে ১০০টিরও কম প্রাপ্তবয়স্ক ওরিনোকো কুমির রয়েছে।
প্রাণিটির বিলুপ্তি রোধে ভেনেজুয়েলার জীববিজ্ঞানী ও পশু চিকিৎসকদের একটি দল সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। বিপন্নপ্রায় ওরিনোকো কুমিরের বাচ্চা লালনপালন করে বনে ছেড়ে দিচ্ছেন তারা। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং ক্ষুধার কারণে আগামীতেও হয়তো অনেকেই এই প্রাণিটিকে হত্যা করবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জীববিজ্ঞানী এবং ফুডেসির প্রধান ওমর হার্নান্দেজ।
জীববিজ্ঞানী এবং ফুডেসির প্রধান ওমর হার্নান্দেজ বলেন, ‘আমাদের গ্রামাঞ্চলগুলোতে দারিদ্রের সমস্যা রয়ে গেছে। এ কারণে মানুষ যা পায় তাই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। খাবারের অভাবেই তারা কুমির শিকার করে মাংস ও ডিম খায়। ফলে এদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা বেশ কঠিন।’
বিজ্ঞানীরা কুমিরের বাসস্থানগুলো চিহ্নিত করে এদের ডিম সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়াও, বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য হাটো মাসাগুয়ারাল থেকেও বাচ্চা সংগ্রহ করা হয়। এরপর রাজধানী কারাকাস থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে টার্মেরো শহরের লেসলি প্যান্টিন চিড়িয়াখানায় ডিমগুলোকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়।
ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার পর প্রায় ১ বছর বিজ্ঞানীরা এগুলোকে লালন পালন করেন। কুমিরের বাচ্চাগুলোর ওজন ৬ কেজি না হওয়া পর্যন্ত এদের বিশেষ যত্ন নেয়া হয়।
প্যান্টিন চিড়িয়াখানার পশুচিকিৎসক ও পরিচালক ফেদেরিকো প্যান্টিন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে ওরিনোকো কুমিরের সাথে কাজ করছি। আমাদের এখানে ওরিনোকোর বেশ কিছু নমুনা রয়েছে। তবে আমি সবসময় বলেছি, কোনো চিড়িয়াখানার পক্ষে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের নমুনা রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ, মানুষ এদের দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড় করেন।’
চলতি বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ-পশ্চিম ভেনেজুয়েলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাপানাপারো নদীতে দুই শতাধিক কুমির সফলভাবে অবমুক্ত করে ফুডেসি ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানীরা।