প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রসূতি সেবাকেন্দ্রে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট
এখন জনপদে
স্বাস্থ্য
0

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রসূতি সেবা কেন্দ্রে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে নাগরিকদের। ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি। এতে চিন্তিত নিম্ন আয়ের সেবাগ্রহীতারা। একই সঙ্গে কমানো হচ্ছে সেবাদানকারীদের বেতন এবং রেড কার্ডের সংখ্যাও। ডিএনসিসি জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিজ উদ্যোগে সেবা চালু রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের অর্থায়ন। ফলে এখন থেকে নাগরিকদের এ প্রকল্পের আওতাধীন সেবা কেন্দ্র থেকে সেবা নিতে হলে অর্থ খরচ করতে হবে। যেখানে আগে নামমাত্র মূল্যে সেবা নিতেন নগরবাসী। আবার রেড কার্ডধারীরা এ সেবা নিতেন বিনামূল্যে।

১ জুলাই থেকে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের সেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে ৫০ শতাংশ অর্থ বহন করতে হচ্ছে নাগরিকদের। অর্থাৎ, চিকিৎসা ব্যয় ১০০ টাকা হলে এর মধ্যে ৫০ টাকা বহন করতে হচ্ছে রোগীকে। আর বাকি ৫০ শতাংশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ডিএনসিসি ২৫ শতাংশ করে বহন করছে। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে রেড কার্ডের সংখ্যা কমানোর। ফলে চিন্তিত নিম্ন আয়ের সেবাগ্রহীতারা।

তারা বলেন, ‘যেকোনো অসুস্থতায় এখান থেকে সেবা নেয়া হয়। নাহয় তো আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায়। আমাদের দূরে কোথাও যেতে হচ্ছে না। এলাকার মধ্যেই সেবা পাচ্ছি। এটা না থাকলে তো আমাদের দূরে যেতে হতো, দৌড়াদৌড়ি করতে হতো।’

আগে এ সেবা কেন্দ্র থেকে রেড কার্ডধারীদের সেবা এবং ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হতো। প্রতি বছর গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জন ব্যক্তির পরিবারকে রেড কার্ড সুবিধা দেয়া হতো। এখন সেটি নামিয়ে আনা হবে অর্ধেকে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটা গাইডলাইন দিয়েছে যে আমরা কিভাবে খরচটা চালাবো। সেক্ষেত্রে, এটা হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে। অর্থাৎ, আমি সার্ভিস দেব বিনিময়ে আপনার থেকে অল্প পরিমাণ চার্জ নেব। এর আগে রাজনৈতিক কারণে রেড কার্ডের অনেক অপব্যবহার হতো। দেখা যেত যারা যোগ্য না তারাও এ কার্ড পেয়ে যেতো। আমাদের একটা রাফ ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে ৫০ শতাংশ রেড কার্ড ইনভ্যালিড হয়ে যাবে।’

এদিকে, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেসের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় জনবল কাটছাঁট না হলেও কমানো হবে সেবাদানকারীদের বেতন। তাই চিন্তায় সেবাদান কর্মীরা।

সেবাদান কর্মীরা বলেন, ‘এটা চলে গেলে একটা বিশাল পরিমাণ জনসংখ্যা সেবা বঞ্চিত হয়ে যাবে। আমাদের এখানে শুধু মধ্যবিত্ত বা গরীব ফ্যামিলি আসে এমন না। অনেক ভালো ফ্যামিলিও আসে সেবা নিতে। কারণ আমাদের সেবার মান ভালো তাই তারা কম টাকায় এখানে সেবা নিতে আসে।’

আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটির নগরবাসীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করে আসছে। এ প্রকল্পের অর্থের মূল যোগানদাতা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি। গত ৩০ জুন এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে ১ জুলাই থেকে এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সরাসরি নিজ উদ্যোগে পরিচালনা শুরু করে ডিএনসিসি। তবে কতদিন এ প্রকল্প নিজ উদ্যোগে চালাবে ডিএনসিসি? এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন এক বছরের মধ্যে এ প্রকল্পে আবারও অর্থায়ন করতে শুরু করবে এডিবি।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘এডিবি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফান্ডিংটা বন্ধ করেছে। আমরা আশা করছি যে ৯ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে তারা আবার এটা চালু করবে। এ এক বছর আমাদের নিজেদের ব্যবস্থায় এ স্বাস্থ্যসেবাটা চালাতে হবে।’

২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের মাধ্যমে ডিএনসিসিতে পরিচালিত হয়ে আসছিল নগর মাতৃসদন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং স্যাটেলাইট কেন্দ্রগুলো। প্রকল্পটির আওতায় ২১টি ওয়ার্ডে ৬টি নগর মাতৃসদন, ৩০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ৬০টি স্যাটেলাইট কেন্দ্রের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হতো।

ইএ