বর্ষা বিদায় নিলেও যখন তখন বৃষ্টিতে রাজধানীর আবহাওয়া বেশ আর্দ্র। যেখানে সেখানে জমে থাকছে বৃষ্টির পানি। ডেঙ্গু আতঙ্কের শহর ঢাকায় এ এক পরিচিত দৃশ্য।
এরইমধ্যে জীবনের নিয়মে চলছে অফিস, স্কুল ও প্রাত্যহিকসব কাজ। কিন্তু বনানীর বাসিন্দা আলিফ খন্দকারের সময় যেন আর কাটে না। মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতালে অসুস্থ মেয়ে পাশে বিনিদ্র রজনী কাটছে তার। বৃহস্পতিবার রাত থেকে মেয়ের ভীষণ জ্বর। ধারণা করছেন স্কুল থেকে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা কামড়েছে তার সন্তানকে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, রাজধানীতে দশটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে রোজ অসংখ্য রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যার মধ্যে ২২ শতাংশই শিশু। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের অভিভাবকেরা জানান, তাদের সন্তানদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। বৃষ্টির কারণে মশার উপদ্রব বাড়েছে, যার কারণে তাদের সন্তানেরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন:
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ বড়দের থেকে কিছুটা আলাদা। প্রাপ্তবয়স্করা শরীর এবং চোখের ব্যথাসহ হঠাৎ জ্বর অনুভব করলেও শিশুরা প্রথমে বমি বমি ভাব এবং কাশিতে ভোগে বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘প্রথমে দেখতে হবে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা। তার যদি জ্বর থাকে তাহলে প্রথম তিনদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে, যে সাধারণ প্যারাসিটামলে চলে যাচ্ছে কিনা। এর পর জ্বর বাড়তেই থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। প্রথম তিনদিন বিশ্রাম করতে হবে। আর পাশাপাশি ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।’
এদিকে মহাখালী ডিএসসিসির ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক জানান, রাতে এবং দিনে যে কোনো সময় ঘুমালে শিশুকে অবশ্যই মশারির ভেতর রাখতে হবে। সাদা বা কম উজ্জ্বল কাপড়ের প্রতি মশা আকৃষ্ট হয় কম। তাই শিশুদের উজ্জ্বল কাপড় না পড়ানোর পরামর্শ তার।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ১৯ হাসপাতাল পরিচালক ডা. কর্নেল তানভীর আহমেদ, ‘ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনের বেলা বেশি কামড় দেয়, তাই সবসময় মশারি দিয়ে ঘুমাতে হবে। পাশাপাশি ফুলহাতার জামা কাপড় পড়াতে পারলে ভালো হবে। চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পেটে পানি জমা, চুলের রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া ডেঙ্গুর এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে হাসপাতালে আসতে হবে।’
২০২২ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে তরলের ঘাটতি পূরণে দুধ, ফলের রস, পানি, ভাতের মাড়, ওরস্যালাইন বা বার্লি খাওয়ানো যেতে পারে। সাদা পানির চেয়ে ফলের রস, ওরস্যালাইন খাওয়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন চিকিৎসক।