যুক্তরাজ্যে ধনী-দরিদ্র এলাকার গড় আয়ুতে বড় ফারাক; মৃত্যুহারে শীর্ষে এশীয়প্রধান অঞ্চল

টাউনহল, টাওয়ার হ্যামলেটস
প্রবাস
0

যুক্তরাজ্যে ধনী ও দরিদ্র এলাকায় গড় আয়ুর ব্যবধান চোখে পড়ার মতো। অর্থনৈতিক বৈষম্য, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসেবা ঘাটতির কারণে টাওয়ার হ্যামলেটসসহ এশীয়প্রধান এলাকায় হৃদরোগ ও ক্যান্সারে মৃত্যুহার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সংকট নিরসনে সমতা ও সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

একই দেশ। অথচ এক এলাকার তুলনায় অন্য এলাকায় মানুষের গড় আয়ুতে পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। যুক্তরাজ্যের অভিজাত ক্যানসিংটন ও চেলসি বারার মানুষের গড় আয়ু সর্বোচ্চ। এরইমধ্যে পুরুষেরা ৮৩ আর নারীরা গড়ে বেঁচে থাকেন ৮৬ বছর।

অথচ মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় পুরুষদের গড় আয়ু ৭৭ আর নারীদের ৮১ বছর। অর্থাৎ মাত্র কয়েক মিনিটের পথের ব্যবধানে মানুষের জীবন ঘড়িতে পার্থক্য ৪ থেকে ৫ বছর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রিটিশদের আয়ু নির্ধারণ করে অর্থনৈতিক বৈষম্য, জীবনযাত্রার মানের পার্থক্য, স্বাস্থ্যসেবার মতো বিভিন্ন বিষয়।

ইউকের নৃতত্ববিদ আয়েশা চৌধুরী বলেন, ‘একজনের অসুখ করলে সেটা সাথে সাথে সবাইকে এফেক্ট করছে। দেখা যায়, নিউহামে বা টাওয়ার হ্যামলেটে বাস করলে অটোমেটেকলি আপনার গড় আয়ু অন্যদের চেয়ে ৫ থেকে ১০ বছর কমে যাচ্ছে।’

টাওয়ার হ্যামলেটসে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ ভাগই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। গড় আয়ু কমার পেছনে ভোজন রসিক বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাস, জেনেটিক সমস্যা, জীবনযাপনের ধরণ ও রোগবালাইসহ নানা কারণকে দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার কথাও জানিয়েছে কাউন্সিল।

টাওয়ার হ্যামলেটের কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর বদরুল চৌধুরী বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে আমরা খেলাধুলা বন্ধ করে দেই। আমাদের জীবনযাপনের ধরন বদলে যায়। আমরা এখন থেকে শুরু করলে সামনের দিনে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয়গুলো আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।’

শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসই নয়, এই তালিকায় এশিয়ান এথনিক মাইনোরিটিদের সর্বাধিক বসবাসকারী নিউহ্যাম, বার্কিং - ড্যাগেনহ্যাম ও হ্যাকনিসহ কয়েকটি এলাকাও রয়েছে। যেখানে দেখা মেলে রোগ বালাইয়ের প্রকোপ।

২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকাশিত জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের হার খুবই বেশি। টাওয়ার হ্যামলেটসের মতো এলাকায় বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। এতে অল্প বয়সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে দ্বিগুণ। চিকিৎসা নিতে অবহেলা ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই এর অন্যতম কারণ বলছেন ডাক্তাররা।

লন্ডন এনএইএসের জিপি ডা. এম এ আজিজ বলেন, ‘ইউরোপীয় স্টাইলে যে জীবনযাপন এখানে মানুষ করে তারা বেশ হেলদিভাবে চলাফেরা করছে। কিন্তু আমাদের বাঙালিদের মাঝে এটা সবসময় হয় না। তাদের অনেকের এংজাইটি আছে, আবার অনেকে নিম্ন আয়ের। অনেকের আবার দেশের কথা ভাবতে হয়।’

কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায় লন্ডনের দরিদ্র ও সংখ্যালঘু এলাকায় কোভিড‑১৯ মহামারির পর থেকে স্বাস্থ্য বৈষম্য বেড়েছে। এতে এসব এলাকায় হৃদরোগ বেড়েছে ৪ গুণ আর ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ২ গুণের বেশি।

ইএ