২০২০ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান নাফিস ফুয়াদ। এক বছরের মাস্টার্স কোর্স শেষে স্কিল ওয়ার্কার হিসেবে যোগ দেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। জানান এই যাত্রা সহজ ছিল না। আর সরকারের বারবার নীতি পরিবর্তনে শঙ্কিত পরবর্তী পদক্ষেপ ইন্ডিফিনিট লিভ টু রিমেইন বা আইএলআর নিয়েও।
ইউকে হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিস ফুয়াদ নিলয় বলেন, ‘প্রতিনিয়ত যেভাবে ইমিগ্রেশন রুলস পরিবর্তন হচ্ছে তাতে আমি কিছুটা শঙ্কিত। যেকোনো সময় আমাদের জন্যও একটা রুলস দিয়ে দিতে পারে। যেমন একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে ১০ বছরের একটা এক্সটেনশন হতে পারে। যদি এটা হয় তাহলে আমি হয়তো চেষ্টা করবো অন্য কোথাও মুভ করার।’
২০২২ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে স্টুডেন্ট ভিসায় ডিপেন্ডেন্টসহ ব্রিটেনে এসেছেন প্রায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী।এদের বড় একটা অংশ স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যেই আসেন। ফলে স্কিল ওয়ার্কারের রুটই অন্যতম উপায়। আর সরকার সেই সেক্টরে বারবার স্যালারি বৃদ্ধির ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অনেকে।
শিক্ষার্থীরা জানান, অনেকেই ভাবেন বিদেশে পড়তে আসলেই টাকা হয়ে যায়। কিন্তু এখানে প্রচুর কাজ করতে হয়।
২০২৩ সাল থেকে কেয়ার ভিসায় ডিপেন্ডেন্টসহ দেশটিতে এসেছেন প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি কেয়ার কর্মী। প্রতারণার দায়সহ নানা কারণে এ পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক কেয়ার প্রতিষ্ঠান। শুধু ইংল্যান্ডে বন্ধ হয়েছে ১৪ হাজার কেয়ার বেড। ২২ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়মে কড়াকড়ি হলেও ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডিপেন্ডেন্ট ছাড়া বেশ কিছু স্কিল ওয়ার্কার ভিসায় আসার সুযোগ রয়েছে।
লন্ডন ইন্টারনেশন্স লিগাল সলিসিটরসের ফাউন্ডার সলিসিটর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১৮০টির মতো পদ বাতিল করা হয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলো। এখনো কিছু পদ খোলা আছে। বাংলাদেশ থেকেও আসতে পারবেন তবে ডিপেন্ডেন্স ছাড়া।’
ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মূল ব্যবসা বলা চলে কারি শিল্প। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কর্মী সংকটে ভুগছে এই শিল্প। প্রতি মাসেই কোন না কোন শহরে কর্মী সংকটে বন্ধ হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কিল ওয়ার্কারদের বেতন বৃদ্ধি ও নতুন নিয়মে রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র সংকটে পড়বে।
বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি অলি খান বলেন, ‘কেউ আসতে চাইলে এত এত রেস্ট্রিকশন তাকে বাধা দেবে। সেজন্য আমরা এ অনিয়মের বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে ফাইট করছি।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা ৯ লাখ ৬ হাজার অভিবাসী সরকারকে চাপে ফেলে। কড়াকড়ি নীতির ফলে ২০২৪ এ তা কমে ৪ লাখ ৩১ হাজারে আসে। নতুন নিয়মে স্টুডেন্ট ও ওয়ার্ক ভিসা সীমিত হওয়ায় অভিবাসন আরও কমতে পারে। চলতি বছর লক্ষ্য এ সংখ্যা আড়াই লাখে নামিয়ে আনা। বৈধ ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে কড়াকড়ি থাকলেও ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে আসা অবৈধ অভিবাসী কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না।