এ আলোচনা এমন সময়ে চলছে, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যদি বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয়, তবে আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।
এর আগে তিন দফা আলোচনায়ও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত ফল আসেনি। ৯–১১ জুলাই ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা আলোচনা ‘এনডিএ’ (নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট) এর আওতায় থাকায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি। তবে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। তারা আশা করছে, আজকের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত পাল্টা শুল্ক কমানোর ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো ঘোষণা আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ও সরকারের সিনিয়র সচিব গোলাম মোর্তোজা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তার সঙ্গে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রেন্ডন লিঞ্চ, যিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আলোচনা সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়। এরপর ৮ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে জানান, শুল্কহার ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে থাকেন। নতুন হার কার্যকর হলে তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা হতে পারে।
সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ধরনের আলোচনায় ফলাফল ধাপে ধাপে আসে। তবে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। আশাবাদী যে, শেষ দিনে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কে এ মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান যতটা কঠোর বলেই মনে হয়, বাস্তবে তা আলোচনা-নির্ভর। সমাধান খোঁজা হচ্ছে আলোচনার টেবিলেই—এটাই ইতিবাচক দিক। তবে শেষ সিদ্ধান্ত কখন আসবে, আর তা কেমন হবে—সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত একমাত্র কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতেই।