কার্বন দূষণ মোকাবেলায় জাবি গবেষকদের ‘লিকুইড ট্রি’ উদ্ভাবন

জাবি গবেষকদের বিস্ময়কর উদ্ভাবন ‘লিকুইড ট্রি’
শিক্ষা , প্রযুক্তি সংবাদ
তথ্য-প্রযুক্তি
0

কার্বন দূষণ বর্তমান পৃথিবীতে অনেক বড় হুমকি। বিশ্বের অনেক দেশই এই দূষণ মোকাবেলায় নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। এবার তাতে যুক্ত হলো দেশিয় গবেষকদের উদ্ভাবন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন ‘লিকুইড ট্রি’ যা দিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে দাবি করছেন তারা।

অ্যাকুরিয়ামভর্তি পানি, দেখে মনে হতে পারে ভেতরে হয়তো মাছ আছে। তবে না, কোনো মাছ নেই, এটি মূলত লিকুইড ট্রি। পানি কি কখনো গাছ হয় কিংবা গাছ কি কখনো পানি হয়? 

লিকুইড ট্রি বাংলায় তরল গাছ, কার্বন দূষণের বিরুদ্ধে নতুন এক উদ্ভাবন তাও আবার দেশি গবেষকদের হাত ধরে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরআইসির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকারের ইডিজিই প্রজেক্টের আওতায় সম্পূর্ণ দেশিয় অ্যালগি এবং নিজস্ব প্রযুক্তিতে এ গবেষক দল উদ্ভাবন করেছেন লিকুইড ট্রির প্রটোটাইপ যা দিয়ে ঘরের ভেতরে ও বাইরে উভয় পরিবেশেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, তাদের উদ্ভাবিত লিকুইড ট্রি মূলত এক ধরনের ফোটোবায়োরিয়্যাক্টর, যেখানে মাইক্রোঅ্যালগি ব্যাবহার করা হয়।

আউটডোর মডেলে সূর্যের আলো এবং ইনডোর মডেলে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে মাইক্রোঅ্যালগি সালোকসংশ্লেষণ চালায়। এর ফলে তারা ঠিক প্রাকৃতিক গাছের মতো কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে।

এ গবেষক দল লিকুইড ট্রির দু’টি মডেল তৈরি করেছেন। এর একটি আউটডোর মডেল, অপরটি ইনডোর। আউটডোর লিকুইড ট্রি মডেল রাস্তাঘাটের ডিভাইডার, ফুটপাত, ছাদ, পার্কিং এলাকা, শিল্পাঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য যা যানবাহন ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং স্থানীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে। 

আরও পড়ুন:

আর অন্যটি ইনডোর লিকুইড ট্রি যা মিটিং রুম, ক্লাসরুম, অফিস, কনফারেন্স হলের মতো বদ্ধ পরিবেশে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে।

এগুলো উপস্থিত মানুষের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এ লিকুইড ট্রি প্রচলিত গাছের তুলনায় অনেক দ্রুত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম। ছোট জায়গায় স্থাপনযোগ্য হওয়ায় এটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের জন্য উপযোগী। 

গবেষকদের উদ্ভাবিত মডেল দু’টি ২৫০ লিটারের এবং এর প্রতিটি একেকটি পূর্ণবয়স্ক গাছের সমপরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাস থেকে শোষণ করতে পারে। 

তবে এ প্রযুক্তির কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে বলেও জানান গবেষকরা। মূলত এর প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন পাশাপাশি এ প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন উপযোগী স্থানীয় অ্যালগি প্রজাতি। 

প্রতিটি লিকুইড ট্রি ৮ থেকে ৯ মাস কার্যকর থাকে, এরপর শৈবাল পরিবর্তন করতে হয়। ব্যবহার শেষে অ্যালগি সার হিসেবে কাজে লাগানো যায়। প্রতি পরিবর্তনে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। 

প্রোটোটাইপ প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল ‘ইনোভেটিং আইওটি বেইজড লিকুইড ট্রিস ফর কার্বন ফুটপ্রিন্ট মিটিগেশন ইন ডেন্স আরবান এরিয়াস অব বাংলাদেশ’।

এসএইচ