ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিদেশে এখন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলো যুক্তরাষ্ট্র। যা আগামী পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকরের কথা রয়েছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ব্রাসেলসের কয়েক সপ্তাহ আলোচনার পরও বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারায় শুল্ক নির্ধারণ করে ইইউ কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে পাল্টা শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইইউ নেতারা। ট্রাম্পের এ শুল্ক নীতিকে মার্কিন স্বার্থ ঘেঁষা বলছেন বিশ্লেষকরা।

গত এপ্রিলের ২ তারিখে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ৩৯ শতাংশ শুল্কারোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য এরপর ৯ জুলাই পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে গেলো তিন মাসেও শুল্ক হার কমানোর ইস্যুতে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটন।

তবে ইইউ ব্লকে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও এবার দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। ট্রাম্পের সম্পূরক শুল্কের তালিকায় নতুন করে নাম উঠে আসলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর। স্থানীয় সময় শনিবার (১২ জুলাই) ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশের ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আগামী পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকরের কথা।

এরইমধ্যে বিষয়টি অবহিত করে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উসজুলা ভন দেইর লিয়েনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। একইদিন ইইউভুক্ত দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি করে ট্রাম্প বলেন, তারা যদি পাল্টা শুল্কারোপের কথা ভাবে তবে এই হার আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে।

মার্কিন ট্রেড ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ দেশগুলোর বাণিজ্য হয়েছে ৯৭৬ বিলিয়ন ডলারের। যেখানে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ২৩৫ বিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতি পূরণেই মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। তবে মার্কিন এই শুল্কের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইইউ নেতারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে আটলান্টিক অঞ্চলের পণ্য সরবরাহের স্বাভাবিক শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। আর এতে নিন্দা ও অসন্তোষ জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। আগামী পহেলা আগস্টের মধ্যে যদি কোন ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানো না যায় তবে এর পাল্টা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি তার।

এক বিবৃতিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বচ্ছ বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশা করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ কোনোভাবেই কাম্য নয়। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ চান না বলে বিবৃতি দিয়েছেন।

ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি একইদিন মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্কারোপের কথা জানান ট্রাম্প। এতে হতাশ দেশটির সাধারণ নাগরিকরা।

মেক্সিকোর বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমরা এখনো প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। তবে আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতিও যথেষ্ট সম্মান রয়েছে।’

আরেকজন বলেন, ‘আমাদের মতো পরনির্ভরশীল দেশের জন্য ট্রাম্পের এই নীতি মোটেও ঠিক নয়। শুল্কনীতির বড় ধরনের প্রভাব পড়বে আমাদের ওপর। যার ছোঁয়া যুক্তরাষ্ট্রের গায়েও লাগবে।’

তবে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর আশ্বাস দিলেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেনবেম বলেন, ‘গতকাল ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আমাদের প্রতিনিধিরা কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিগগিরই আমরা চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি। এতে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।’

ইইউ ও মেক্সিকোর আগে বাংলাদেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও ব্রাজিলকেও শুল্ক ইস্যুতে চিঠি পাঠান তিনি। ট্রাম্পের এ শুল্কহার কমানোর নামে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান করছে ওয়াশিংটন তা নিতান্তই মার্কিন স্বার্থ ঘেঁষা। এসব দেশকে কোন বিনিময় না দিয়ে তাদের কাছ থেকে সব সুবিধা পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এমনটাই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

মার্কিন অর্থনীতি বিশ্লেষক মেরি লাভলি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে বাণিজ্য অ্যাজেন্ডা তুলে ধরেছে তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক কিছু অর্জন করতে চান। প্রায় সব দেশের সঙ্গেই সে এমনভাবে বাণিজ্য চুক্তি করতে চান যেখানে দুই পক্ষের উইন উইন পরিস্থিতি না থেকে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জয় চান। অপরপক্ষকে কিছুই দিতে চান না তিনি।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থপর এই শুল্ক নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মত অনেকের।

সেজু