ভারতে ডায়মন্ড বা হীরার নগরী হিসেবে পরিচিত গুজরাটের সুরাট শহর। যেখানে হীরা কাটিং ও পলিশের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। এছাড়া বিশ্বের প্রতি ১৫টি প্রাকৃতিক হীরার মধ্যে ১৪টিরই কাটিং ও পলিশের কাজ হয় সুরাটে।
হীরা পলিশ ও কাটিং শিল্পের জন্য গুজরাটের সুরাট ছাড়াও আহমেদাবাদ ও রাজকোটেরও বেশ ডাক-নাম রয়েছে। সব মিলিয়ে এই খাতে কাজ করেন ২০ লাখেরও বেশি ভারতীয়। আর এখানে প্রক্রিয়াজাত হীরার সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রত্ন ও জুয়েলারি রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিল-জিজেপিসির তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওয়াশিংটনে ৪৮০ কোটি ডলারের হীরা রপ্তানি করেছে নয়াদিল্লি। যা ভারতের মোট হীরা রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক ঝড়ে ধুঁকছে ভারতের ডায়মন্ড শিল্প। কারণ ভারত থেকে হীরা আমদানিতে আগেই ২.১ শতাংশ শুল্ক বসাতো যুক্তরাষ্ট্র। এবার ট্রাম্প ঘোষিত অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ যোগ হওয়ায় যা দাঁড়িয়েছে ৫২.১ শতাংশে।
এতে মার্কিন ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। বিক্রি কমে যাওয়ায় কর্মীদের বেতন দেয়া এবং অন্যান্য খরচ মেটানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বন্ধের ঝুঁকিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডায়মন্ড কাটিং শিল্প।
আরও পড়ুন:
কর্মীদের একজন বলেন, ‘এটি আমাদের উৎপাদন বিভাগকে এরইমধ্যেই প্রভাবিত করছে। কারণ মার্কিন শুল্কের ফলে খরচ ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। তাই হীরা শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে। এ অবস্থা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন।’
এর আগে করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর জেরেও হিমশিম খেয়েছে ভারতের হীরা খাত। কারণ ভারতের প্রধান কাঁচা হীরা সরবরাহকারী দেশ হলো রাশিয়া।
ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে যাদের ওপর রয়েছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা। এবার মার্কিন শুল্ক চাপে শুধু গুজরাটে ২ লাখ কর্মী চাকরি হারানোর শঙ্কায়। এরইমধ্যেই ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি সাবেক কর্মী সরকারি ভাতার জন্য আবেদন করেছেন।
কিন্তু ভারতের হীরা খাতে এ সংকটের জন্য শুধু মার্কিন শুল্ক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা মহামারিতেই নয়, বাজারে কৃত্রিম হীরার আধিপত্যকেও দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জন্য মার্কিন গয়নার কারিগরদেরও সংকটে পড়তে হবে বলে মনে করেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।