যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপকে ভয় পায় না চীন: শি জিনপিং

যুক্তরাষ্ট্র
বিদেশে এখন , উত্তর আমেরিকা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপ ইস্যুতে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। জানালেন, অনৈতিকভাবে চাপিয়ে দেয়া কোনো সিদ্ধান্তকে ভয় পায় না বেইজিং। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন, এখনও আলোচনায় বসতে রাজি তিনি। চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিয়ে চীনের পক্ষ থেকেই প্রথম পদক্ষেপ আসবে বলেও আশা ওয়াশিংটনের। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, শি জিনপিংয়ের পক্ষ থেকে আলোচনায় এগিয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেবেছিলেন, চীনা পণ্যে দফায় দফায় শুল্কারোপের পর নতজানু হয়ে হয়ত শুল্ক মুক্তির জন্য মার্কিন প্রশাসনের শরণাপন্ন হবেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীন থেকে আসবে একটা ফোন। অথচ হলো তার উল্টো।

শুল্কযুদ্ধ নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন শি জিনপিং। বললেন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপকে ভয় পায় না চীন। বাণিজ্য যুদ্ধে কোন পক্ষই জয়ী হয় না, উল্টো আন্তর্জাতিক বিশ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়তে হয়।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না। সারাবিশ্বের বিরুদ্ধে চলে গেলে তখন কোণঠাসা হয়ে যেতে হয়। গেলো ৭০ বছর ধরে চীনের উন্নয়ন নির্ভর করছে আত্মনির্ভরশীলতা আর কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে। কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়াকে ভয় পায় না চীন। পরিবেশ যতোই প্রতিকূলে যাক, চীনের আত্মবিশ্বাস আছে। নিজের ভালোতে মনোযোগ দেবে বেইজিং।’

বরাবরই যেন চীনের সঙ্গে সর্বোচ্চ বাণিজ্য যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন ট্রাম্প। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুল্কারোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও চীনা পণ্যে সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করে বসে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এরপরও বারবার বলে যাচ্ছেন বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ করতে চীনের সঙ্গে আলোচনা আর চুক্তিতে যেতে রাজি তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চীনের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে চাই। আমাদের দেশ থেকে দীর্ঘদিন সুবিধা নিয়েছে তারা। আমার জায়গায় থাকলে কী করতেন ভেবে দেখেন। অনেক প্রেসিডেন্টের কথাই বলা যায়। আমার প্রশাসন সবকিছু একটা সিস্টেমে আনছে। শি জিনপিংকে সম্মান করি। আমার বিশ্বাস, তিনি এমন কিছু করবেন, যা দুই দেশের জন্যই লাভবান হবে।’

চীন বলছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য দ্বার উন্মুক্ত আছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে। চাপ দেয়া, ব্ল্যাক মেইল করা কিংবা হুমকি দিয়ে এই সমস্যার কোনো ধরনের সমাধান আসবে না। আলোচনা হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হি ইয়ংকিয়ান বলেন, ‘চীনের অবস্থান পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী চীন। কিন্তু অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা সমস্যা উস্কে দেই না, কিন্তু সমস্যাকে ভয়ও পাই না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ আন্তর্জাতিক নীতি বহির্ভূত। অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরির এ ধরনের উদ্যোগের চরম বিরোধিতা করি। দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় চীন সবকিছু করবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন বাণিজ্য নীতির কড়া সমালোচনা হচ্ছে সারাবিশ্বে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে করে শুধু আমদানি বাণিজ্য নয়, কমে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাণিজ্যও। দেখা দিতে পারে বিশ্ব মন্দা।

যদিও তীব্র বাণিজ্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকলেও চীন ছাড়া অন্য দেশে শুল্কারোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পাল্টা শুল্কারোপ স্থগিত করেছে ইইউ।

ইউরোপিয়ান কমিশনের মুখপাত্র ওলফ গিল বলেন, ‘আমরা আলোচনা করতে চাই। শুল্কে স্থগিতাদেশকে স্বাগত জানাই। অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমরা শুরু থেকেই শান্ত ছিলাম। আমাদের মনোভাব পাল্টায়নি। এমন আলোচনা করতে চাই, যেখানে দুই পক্ষ লাভবান হবে। এমন শুল্ক থেকে দুই পক্ষকে বিরত থাকতে হবে, যেখানে উভয় পক্ষের ক্ষতি হয়।’

হোয়াইট হাউজ বলছে, আলোচনার জন্য কখনোই এগিয়ে যাবে না যুক্তরাষ্ট্র। এগিয়ে যেতে হবে চীনকেই। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশা, সমস্যা সমাধানে ফোন আসতে পারে শি জিনপিং প্রশাসনের কাছ থেকে।

কিন্তু বেইজিং সূত্র বলছে, আলোচনার পরিবর্ত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত চীন সরকার। সেক্ষেত্রে চীনের পক্ষ থেকে আলোচনার কোন সম্ভাবনাই নেই।

পৃথিবীর দুই ভূ-রাজনৈতিক শক্তির এমন ভয়াবহ বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু দুই দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, শক ওয়েভের মধ্য দিয়ে যাবে পুরো বিশ্ব অর্থনীতি, এমনটাই আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

এসএইচ